কবি গোলাম রসুল এর একগুচ্ছ কবিতা

কবি গোলাম রসুল এর একগুচ্ছ কবিতা

ধূসর শব্দঘন্টা
একটি আলোর মধ্যে পৃথিবীকে শান্ত দেখানো হচ্ছে
রাস্তাগুলোর বিকৃতি ঝকঝক করছে
নৈঃশব্দ থেকে পেরেকগুলো টেনে তুলছে মিস্ত্রিরা
পুরোনো কামানগুলোর গায় বুনোঘাস

মানুষ তাদের ভালোবাসাগুলো তুলে রেখেছে কব্জির মধ্যে
এবং তারা রক্ত খাচ্ছে একাকিত্বের

টেবিলে রাখা রুগীর মতো চাঁদ
আকাশ হাসপাতালের করিডোর

ভিজে শহর
প্রাচীনকাল থেকে ডুবে থাকা জাহাজের শিকড়

ধূসর শব্দঘন্টা
একটি মৃতদেহ ছুঁড়ে ফেলার সময় টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে 

আগামীকাল এখান দিয়ে আধুনিক সভ্যতার শ্বাসকষ্টের মধ্যে দিয়ে গাড়িগুলো যাবে

 

এবং হারিয়ে গিয়েছিলাম কঠিন বইয়ের মধ্যে
আমার কাছে মুদ্রার মতো সর্বত্র একটি শূন্যতা রয়েছে

আমার মুখ নেই

যাযাবর তাঁবু
যার ধাঁধায় সুতোগুলো জড়িয়ে রয়েছে জীবনের সাথে
বৃষ্টি পড়ছে
আর বৃষ্টি মধ্যে আমরা একটি সোনার দাফন করছি

অন্ধকার ভ্রমণ করছে তারাদের নিয়ে
গাড়ির গতিগুলো বহন করছে প্রান্তর রেখা এবং ফাঁপা শব্দ
চারিদিকের অস্তিত্ব সন্ধ্যার মতো ডুবে যাচ্ছে
ভঙ্গুর  অবিষ্কার করছে একটি জীবন্ত গুহা
হঠাৎ চাঁদ আঘাত করে তীরে
আকাশ চেপে ধরে বুকের শিশু প্রজাপতিদের
সে সময়ে কান্নার জন্য অল্প কিছুক্ষণ সময় নিই
এবং মহাকালে হারিয়ে যাওয়া একটি বিন্দুর মধ্যে আমাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যাই

এত ভিড়
আমি নাটকের মধ্যে খুঁজছিলাম আমার মাথা
যা আমার পিতা পেয়েছিলো চাষের জমিতে
এবং হারিয়ে গিয়েছিলো  কঠিন বইয়ের মধ্যে

 

জলাভূমিতে এত নুন
দূর
অনেক আলোকবর্ষ দূর মানুষ

কয়েকটি নক্ষত্রকে রেখাঙ্কিতা করা হয়েছে

যেমন
পৃথিবীর জন্ম হয়েছিলো সিজার করে
তাই জলাভূমিতে এত নুন

এবং
এ পর্যন্ত কখনো পৃথিবীর জন্মদিন পালন করা হয়নি

যখন আমরা সাগরের মধ্যে নৌকার শহরে বসবাস করতাম তখন নিষ্পাপ প্রাগৈতিহাসিককাল

তখন আকাশ অনন্তকালের কোলাজ
তার মাস্তলে সূর্য এবং চন্দ্র ক্রূশ বিদ্ধ

ধীরে বয়ে চলেছে পর্বতমালা
আকাশের প্যাটার্ন ভেঙেছে বর্ণমালার শহর
দিগন্ত ধূসর অজানা
খসড়া দ্বারা ঘেরা মেঘ
এবং নক্ষত্ররা দীর্ঘরাতের আলো দ্বারা বৃষ্টিপাত করে

আধুনিক জীবন
একটি ফাঁপা যার ভেতরে হিসহিস করছে হাওয়া
শূন্যতা দিয়ে রক্ষা করছে পাথর
ওয়াগান থেকে ফেটে বেরুচ্ছে লোহা

বন্দি জল
হাইওয়ে জুড়ে সমুদ্র
অলৌকিক অন্ধকার ধূমপান করছে
পৃথিবীর জন্ম হচ্ছে একটি হাসপাতালে
যেখানে স্রোত টেনে নিয়ে যায় কাঠের ঘন্টাকে

 

আমি একটি ধারণা মাত্র
আমি মেঘে জন্মেছি
মেঘে বেঁচে আছি
মেঘে মরে যাবো
আমাদের তটভূমি বিদ্যুৎ রেখা

বৃষ্টির জমায়েত জায়নামাজ

তখন এবং এখন
আমি একটি ধারণা মাত্র

বেলুনের মতো উড়ে যাচ্ছে হরেক রকমের শহর
লোহার নৈঃশব্দ্য তাকে রেখেছে ঘিরে

প্রেম আর ধর্ম একটা লঘু বন্ধনী

আমার কষ্ট আমার বাড়ি
আমার কষ্টের বর্ণনা আমার বিছানা

আমার বাবা মরে গেছে সূর্যকে আনতে

 

কফিন বাহক আয়না
আগামীকাল যোগ দেবো রাষ্ট্রহীন মানুষের অপরূপ মিছিলে
তার আগে আজ গভীররাতে স্বপ্ন দেখবো মহাকাশ
আয়ত্ত করে নেবো ধ্রুবতারা

আয়নার পাল
নৌকার সমস্ত পাতাল
গুছিয়ে নেবো নদীর ধারে ঘুমন্ত শিশুদের স্বপ্নাবলী 

বরদাস্ত করবো না কোনো ধর্ম
একটি উপন্যাস কিংবা মহাকাব্যের শিরোনাম হবে আয়োজন

এমন যাওয়ার সময় ছায়াপথের আমের গাছগুলো
নুয়ে পড়বে আমাদের গায়ে
একটি সবুজ কমেডি

সেই অপরূপ মিছিলে থাকবে যারা

একটা মানুষের কিছুই নেই শহীদদের তকমা ছাড়া
একটা মানুষ খিদের জ্বালায় আস্ত একটা শহর গিলতে গিয়ে গলায় শ্বাসরোধ হয়ে মারা গেছে থাকবে তার আত্মা

একটা মানুষের মুখ নেই যার মুখ খোয়া গেছে কোনো গৃহযুদ্ধে

ঘুড়ি আর সাইকেল মধ্য যখন আমরা যাবো
আমাদের সামনে একঝাঁক পাখি উড়বে খোলা বইয়ের পাতার মতো যেটা হবে আকাশে সংগ্রামরত জাতিগুলোর ইতিহাস
নক্ষত্রের জল আকাশের মণিকাঞ্চন ছাপিয়ে গড়িয়ে পড়বে
পুনরায় ফিরে আসবে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া নক্ষত্রদের গর্তে

আক্রমণ প্রতিহত করবো সেই ঢাল গুলো দিয়ে
যে নরমুণ্ড গুলো গাড়ির চাকার মতো ব্যবহার করতে করতে একসময় ফেলে দিয়েছিল

প্রতিরোধের সামনের সারিতে থাকবে কবর থেকে বেরিয়ে আসা বাহু আর আঙুলগুলো

তাও যখন আমরা দেখবো কফিন বাহক আয়নাগুলো
বন্ধু বাতাস হয়ে উঠবে পিপীলিকার মুখ
সমুদ্র ছুঁড়বে কাঁকড়ার দাঁড়া

গোলাপী মিছিল ঢালবে কৃষ্ণরক্ত অন্তরীক্ষে

 

যুদ্ধের প্রথম দিনে
যুদ্ধের প্রথম দিনে একটি কামানের মধ্যে আমার জন্ম
ধর্ম আকাশে লোহা উৎপাদন করছে
কোনো ভাড়াটেকে বাঁচাতে পারেনি চাঁদের আলো

রাষ্ট্র জলের মতো মৌলিক নয়
এদেশ ওদেশ সেদেশে প্রতিদিন ভীষণ একাউন্টার

কবরের নামগুলো স্বীকার করে না কোনো রাষ্ট্র
একটি ছায়ায় ভেঙে যায় আদালত

কোনো বই যুদ্ধ থামাতে পারেনি
কোনো লেখা খুঁজে পায়নি ঈশরকে

আমি যুদ্ধ
আমার চোখ রাইফেলের গুলি যার মধ্যে সূর্যও রয়েছে
আমার মুখ পৃথিবী
আমার মধ্যে পৃথিবীর সব দেশ বসবাস করে




إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم