একগুচ্ছ কবিতা :: মারুফ আহমেদ নয়ন
দীর্ঘশ্বাসের বন্দর
লাবণ্যময়ী রত্নপাথর! লোহিত হীরের
অঙ্গুরীয়।
জয়তুন বনে চুরি করেছি হরিণীর রূপ।
বাজে
সুরবাহার, তোমার বিবাহবাজনা।
স্থলশামুকের
চলন শৈলীতে মুগ্ধ হয়ো না। শরীরে
পরজীবী ভয়।
মদির মৌসুম আনে, ঘূর্ণিঝড়। উপকূলে
বিপদ!
পোতাশ্রয়ে ডুবো জাহাজেরা ঘুমিয়ে
পড়েছে। যদি
জাহাজেরা পেয়ে যায় নাবিক জন্ম। তোমাকে
শোনায় থিয়েচিনের আখ্যায়িকা।
জ্যোতির্বিজ্ঞান
ভুলে মূর্খ হৃদয় মজেছিল তোমার ভাবনায়।
পরীরা
হাঙ্গরের ঠোঁটে তুলে দিচ্ছিল আহার।
ফুঁসে ওঠে
ঢেউ। জলের মাতম! বুঝি, তলিয়ে যাবে
বাহানা।
নোনা জলে হবো পাথর। দেবদূত, জল সংসারে
হলে মরণ। তাঁকে অনুকরণ প্রিয় সিলসের
বার্তা।
এই জলকেলির দিন, পাখিদের গানের
স্বরগ্রাম।
অনুপস্থিত ছিলাম, তোমার দীর্ঘশ্বাসের
বন্দরে।
ওলেন্ডার
ফুলের পাপড়ি
প্রাচীন পাপে বিদ্ধ হৃদয়! চিরসবুজ বনে
কাঠময়ূর
ডেকে উঠে তীব্র শিসে। মহামহিম ফাগুনে,
ফুটছে
নীলাভ কাঞ্চন। সৌরভ বয়ে আনছে মাটির
খাঁচায়।
মহুয়া মাতাল হাতিটি ঘুমিয়ে পড়েছে।
দেহের সঙ্গে
বিচ্ছেদ হলো রুহের। তোমার বিষে
জর্জরিত হৃদয়।
পান করতো ওলেন্ডার ফুলের পাপড়ি। ভুল
প্রেমে
ফোটালাম সাগুয়ারো ক্যাকটাস। হৃদয়
তোহফা
পাঠালাম। গ্রহণ করো। হাঁটি, লাও চাই
প্রভিন্সে।
পাথর চোখে অশ্রু আসে না। ফোগস্ট্যান্ড
বিটলের
মত কুয়াশা সিঞ্চন করি। হাওয়ার
আর্দ্রতায় শিখি,
মোমের দহনবিদ্যা। কেন যে নির্বোধের
মতো ঘুরেছি
জুয়ার টেবিলে। বন্ধকী রেখেছি দশটি
আঙ্গুল।
জানি, ভুল দানে তোমারই জয়। ক্রীতদাস জীবন।
ঘুরছে দাস বিক্রির হাটে। আমাকে ক্রয়
করুন,
বানু। কেননা আমি বাধ্য গোলাম এই
তল্লাটে।
কালো
জাদুর কবুতর
তোমার প্রেমে ধ্বংস হই! উপহাস করে
হাস্যমুখী
এলিয়েন। ডারউইন সমুদ্রপথে পাড়ি
দিচ্ছেন
আমেরিকা। জলমধ্যে রপ্ত করেছেন
শিলাখণ্ডের
মর্যাদা। নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু জানে,
শরীরে
প্রেম মদের নদী। কমলা রঙের পেঙ্গুইনরা
দল
মার্চ করছে। জানাচ্ছে সম্ভাষণ। নববধূ
পড়ছে
কবুল। তোমায়
ঘিরে সখীদের হাসি। জারবেরা
পুষ্পের ঘ্রাণ পোড়ায় হৃদয়। ডুবছি
আকাফুজির
ঘুমে। কেন যে হৃদয় মশহুর হয়েছিল।
দিয়েছিল
সে আত্মহত্যার উপায় বলে। জুয়ারি কি
বোঝে,
রুহিতনের সাত। রাতভর মর্গে ডোমের
দুঃস্বপ্ন।
ভোর! সেলাই যজ্ঞে মেতে ওঠে। বুঝি,
বরফবনে
ঘুমিয়ে ছিল। রূপবতীর মৃত্যু হলে উড়ে
যায়,
সবুজ বাঁশপাতির ঝাঁক। পাহাড়ে জাগ্রত
গণক
চাঁদ। জানি, আমি ঘুমিয়ে পড়লে পৃথিবীতে
নেমে আসবে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস।
স্যালমনের
জীবনচক্র
জেগে আছি। ভ্রমণে নিও স্বর্গীয়
অট্টালিকায়।
সাদা মোতির গম্বুজ ও দীর্ঘাকায়
বৃক্ষের দেশে।
হাঙ্গর সমাবেশের দিনে করিনি পাঠ,
স্যালমনের
জীবনী। ভীতু হরিণীকে চুম্বনে হইনি
বাঘের সখা।
বসন্ত এলে মৌয়াল সেজেছি। ছুটেছি গেওয়া
ফুলের বনে। তোমার মুখশ্রী প্রতিবিম্ব
হয়ে ভাসে।
কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হয়, শ্বাসমূল
বনভূমিতে।
কালিন্দীর স্রোতে ডুবে আছে কুমির।
আমিষ ঘ্রাণে
পরিতৃপ্ত মন যেন দ্রুতগামী খরগোশ।
কাদায়
গড়াগড়ি খেলে। তারপর কুমিরের স্বপ্ন,
চোয়ালের
গর্তে প্লোভার খাদ্য কণা খুঁটে খায়।
তাকাই
উপকূলে, আছড়ে পড়ে ঢেউ। ক্ষুদে
অমেরুদণ্ডী
প্রাণী শিকার উৎসব। আমার নির্লজ্জ মন! তোমার
প্রসঙ্গে বলে, ছুটে যায় গুলবাগিচায়।
যেখানে ফুলের
অধিক কাঁটার পরিচর্যায় মগ্ন তুমি।
তোমার পায়ের
কাছে শান্ত হয়ে রোদ পোহায় চন্দ্রবোড়ার
ছানারা।
হাওয়ায়
প্রেমগাঁথা
তাঁহার প্রেমে পুড়ে অঙ্গার হয়েছি।
ছলনাময়ী
মেলে ধরেছিল মাংসের কারুকাজ। অন্ধের
মতো পেরিয়ে গেছি, পর্বতশৃঙ্গের ঘুম।
চেরির
বন মোহনীয় সুরে বাজাচ্ছে বাঁশরী।
যুবতীর
কান্না! অনন্য রুপসীর ভাস্কর্যে
হয়েছিল প্রাণ
সঞ্চার। ছিল পাথরের অবয়ব। ত্বকে ফুটছে
রূপের পরমায়ু। আমি সেই ভাস্কর,
নখাগ্রে
গলিত লাভা স্রোত। গড়েছি তোমাকে প্রেমের
ভঙ্গিমায়। বসন্ত ঋতু, ভাদ্রা ফুলের
মধু পানে
দিশাহারা মৌটুসি। হাওয়ায় প্রেমগাঁথা।
তাবুঁতে
রাবাবা বাজে। সংগীত! লু-হাওয়া শোনাবে
উপকথা, শাদ’হাওয়ার শিং। উটের গ্রীবার
মতো
দেহীয় নৃত্য। বেদুইন যুবক জগৎময় ছড়িয়ে
দিচ্ছে, বিষাদের সুরধ্বনি। বিভ্রম
জাগানিয়া।
দেখো, তাই মরুজোস্ন্যা সাজায়
ওয়্যারহায়েনার
কফিন।
সাগর
ডাইনির রূপকথা
ক্রান্তীয় বৃষ্টিবনে! ফড়িং নর্তকীর
প্রেমে পড়েছি।
স্বপ্ন, সে আমাকে টেনে এনেছে পাহাড়ি
গুহায়।
তীক্ষ্ণ নখের আঁচড় কেটেছে বুকে। উপড়ে
নিয়েছে
চোখ। যেন হই তার অনুগত। নচেৎ ফেলে
দেওয়া
হবে আগুনের চুল্লিতে। নরখাদক রূপসী,
আমাকে
মুক্তি দাও। দীর্ঘকাল সমুদ্র উৎসবে
মেতে ছিলাম।
কাপ্তান জীবন যেন হাঙরের বিহু নৃত্য।
ঝড়-ঝঞ্ঝার
রাতে দীর্ঘ ঢেউ আছড়ে পড়ে পাটাতনে।
বজ্রের
ঝলকানি। হাওয়ার বেগ বুনো ঘোড়ার
সওয়ারি।
আইরিশ সাগর নির্জন সৈকতের দিকে
তাকিয়ে।
যেন সাগর ডাইনিরা ছড়িয়ে দিচ্ছে
মায়াজাল।
নাবিক সমুদ্র ভালোবেসে ক্ষয় করেছে
যৌবন।
তার মৃতদেহ ভাসছে বালুতটে। তাকে ঘিরে
ছিল
পিরানহা। মনে পড়ে, মানুষের বেঁচে
থাকার শেষ
আকুতির মতো তোমায় ভালোবেসেছিলাম।
আত্মসমর্পণের
ভঙ্গিমা
মরুভূমিতে নির্মাণ করছি শীশ মহল।
পাহাড়ের
খাঁজে প্রবাহমান জলধারা জিজ্ঞাসা
করছে, কার
প্রেমের জন্যে আয়োজন। হেসে ওঠে
লু-হাওয়ার
রাত। নার্গিসের ঘ্রাণে ছটফট করে ইশকের
ঘোটক।
তাঁবুতে নৃত্যের মহরত। খেজুরের মদ।
ভ্রান্ত স্বপ্ন,
সমুদ্রের কাছে টেনে আনে। লাস্যময়ী
জলোচ্ছ্বাস
গাইছে নাবাতি। গাল্লাবেয়া পরিহিতা
মীনেরা
খেলছে ঢেউয়ে। লুণ্ঠনে পারদর্শী ছিলাম।
তোমার
কাছে আত্মসমর্পণের ভঙ্গিমা, প্রেমের
নজরানা।
মঞ্জুর করো। বাক্যলাপের স্মৃতি,
ছুঁড়ির তীক্ষ্ণতা।
হয়েছি যবেহ। পশুর আর্তনাদ। প্রথম
দর্শনে
পরাস্ত করেছিলে কুশলতায়। জানি না,
কুচক্রী
স্বভাব। অসার শরীরে ঘুরছি অপরিচিত।
যেন
শুষ্ক ভূমি শুষে নিচ্ছে জল। তেমন হৃদয়
জুড়ে
তোমার পিপাসার ধ্বনি।