রফিক
ওসমান এর ‘ভ্রমণ গল্প’
শালবন বিহারে একদিন
সময়টা
ছিল ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সাল। অমর একুশে বইমেলা চলছে বাংলা একাডেমিতে—মাস
জুড়ে। সামিয়া আর আমি ঢাকা গিয়েছিলাম আমার ১ম উপন্যাসের মোড়ক উন্মোচন করতে। ১৩
ফেব্রুয়ারি আড্ডা দিচ্ছিলাম বাংলা একাডেমি চত্তরে। পরের দিনই ১৪ই ফেব্রুয়ারি—বিশ্ব
ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসা দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে আমি সামিয়াকে বললাম, চলো কোথাও
বেড়িয়ে আসা যাক।
‘কোথায় যাবে শুনি?’ সামিয়া বলল।
‘তোমার কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে থাকলে বলো—নিয়ে
যাই।’ সামিয়া কিছু বলছে না। হয়তো ভাবছে…। কিছুক্ষণ ভাবনায় হাবুডুবু খাচ্ছিলাম
আমিও।
‘কোথায় হারালে তুমি?’
‘না মানে, কোথাও না।’ সামিয়ার ডাকে ঘোর ভাঙ্গে আমার। ‘ভাবছিলাম
এমন জায়গায় যেতে পারলে ভালো হতো। যেখান থেকে দিনে দিনে ফেরা যায়। তোমার যদি
জার্নিতে সমস্যা না হয়। তাহলে বাংলাদেশের প্রাচীন নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম শালবন
বিহারে যাওয়া যায়। চলো আজ উঠি।’
অনাগত
দিনটই ধরা দিলো ১৪ই ফেব্রুয়ারি। গোসল ও নাস্তা সেরে রওয়ানা হলাম। সায়দাবাদ
থেকে হানিফ পরিবহনের বাসে চড়ে বসলাম ঠিক সাতটায়। মিনিট পাঁচেক পর বাস ছাড়ে।
কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত জ্যামের কারণে থেমে থেমে চললেও ব্রিজ পার হয়ে বাস চলছে সাঁই
সাঁই করে। যেন সড়ক পথে বিমানের ছোঁয়া। আমার কোলে মাথা রেখে সামিয়া গভীর ঘুমের
সাগরে ডুবে আছে। এর কারণ খুব ভোরে উঠতে হয়েছে সামিয়াকে। অনেকেরই গাড়িতে চড়লে ঘুম
পায়। সামিয়া সেই গোত্রের মানুষ। আমি রাস্তার দু’পাশের বাড়িঘর, গাছপালা দেখছি। মনে
হচ্ছে আমি বসে আছি আর সবকিছু মেঘের মতো উড়ে উড়ে যাছে বাতাসে অজনায়। কাছাকাছি আসতেই
সামিয়াকে কোমল শান্ত সুরে মোলায়েম গলায় ডাকলাম আমি।
‘সামিয়া,
এই সামিয়া, আর কত ঘুমাবে এবার ওঠো।’
সামিয়া
চোখের পাতা খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করে, ‘আমরা কি এসে পড়েছি জয়?’
এই তো
আর কিছুক্ষণ লাগবে।
সামিয়া
উঠে বসে। তারপর চারপাশে তাকায় এবং আমার কাছে জানতে চায়, ‘সেখানে কি খুব আনন্দ
হবে?’
আমি
উত্তরে বললাম, ‘কেনো নয়!’ সাথে প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম—‘আচ্ছা বলো তো আমরা এখন কোথায়
অবস্থান করছি?’
উত্তরে
সামিয়া বলে, ‘আমি কী আর তোমার মতো দেশ ভ্রমণের দায়িত্ব নিয়েছি নাকি!’
আমি
বললাম, ‘এখন কুমিল্লার পথে, তবে কিছুক্ষণের মধ্যে বাস থামবে ময়নামতি
ক্যান্টনমেন্টের সামনে। আমরা ওখানেই নামব। তারপর যাব আমাদের প্রতীক্ষিত শালবন
বিহার দেখতে।’
সামিয়া
জানতে চাইলো, ‘বিহার কী জয়?’
‘বৌদ্ধ
ভিক্ষু বা সন্ন্যাসীরা সাধনা করার জন্য চলে যায় নির্জন স্থানে, এভাবে অনেক ভিক্ষু
যেখানে একসঙ্গে ধর্ম সাধনার জন্য বাস করে, সেই স্থানই বিহার।’ আমি বললাম।
ভিক্ষুরা
কি আমাদের সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেবে?
এখনতো ওখানে কেউ থাকে না।
কেন থাকে না?
বিহারটি তো শত শত বছর পুরানো...
বিহারটির বয়স কত হবে?
বিহারটি নির্মিত হয়েছিল অষ্টম শতকে। তা আজ থেকে প্রায় বারোশ বছর
পূর্বে। সেখানে তারা পাঁচশ বছর বাস করেছিল, তারপরে কেউ আর সেখানে থাকেনি।
কেনো থাকেনি, তুমি কি তা বলতে পারো আমার ইতিহাসবিদ?
সে অনেক কথা, শত শত বছর বাস করার পরে কেনো বিহার ছেড়ে ভিক্ষুরা
চলে গিয়েছিল বা চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল কিনা তা সে ইতিহাস আজও আমরা জানতে
পারিনি। অযত্ন অবহেলা আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিহারটি প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। চাপা
পড়েছিল গাছপালার নিচে। এখন বিহারের শুধু কিছু অংশ টিকে আছে, বেশিরভাগ চাপা পড়ে আছে
মাটি বা টিলার নিচে।
হঠাৎ
বাসের গতি কমে এলো। বাইরে তাকিয়ে দেখি আমরা স্টপেজে পৌঁছে গেছি। বাস থামতেই বাস
থেকে নেমে আমরা রাস্তা পার হয়ে রিক্সায় চেপে বসলাম। রিক্সা চলছে তো চলছেই। অবশেষে
রিক্সা গিয়ে থামে বিহারে প্রবেশের টিকিট কাউন্টারের কাছে। কাউন্টারের দিকে এগিয়ে
যেতে যেতে হঠাৎ সামিয়া বলে উঠল, ‘এটাতো লাল মাটির দেশ মনে হচ্ছে। এখানকার মাটির রঙ
লাল কেনো?’
আমি সামিয়ার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললাম, ‘ডান পাশে বড় বড় গাছ
দেখছ না, ওগুলোর পেছনেই আছে লালমাই পাহাড়। আর এ অংশটার নাম ময়নামতি। পুরো এলাকাটিই
লাল মাটির। কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করে প্রধান গেট পেরিয়ে দু'জন প্রবেশ করলাম
বিহার প্রাঙ্গণে। শতশত বছরের প্রাচীন এই বিহার দেখতে অনেক দর্শনার্থী এসেছে। তাদের
মধ্যে স্কুল কলেছের শিক্ষার্থীরাও রছেছে। কয়েক কদম এগিয়ে কয়েকজনের সাথে পরিচিত হই
আমরা। তাদের মধ্যে মাধ্যমিকের ছাত্র রাকিব হাসান, আরিয়ান আহম্মেদ দিপু, জুয়েল
ফকির, শাকিল বেপারি, সোহেল রানা, মারুফ শেখ, শাহীন শেখ, ঈমন, রিংকু আর উচ্চ
মাধ্যমিকের ছাত্র ও সাংবাদিক শাওন মিয়া, ঈশিতা, মাহফুজ আহমেদ, ফারজানা আক্তার,
সজীব মাহমুদ, ফারহানা আক্তার, সিমা আক্তার, কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা ওদের মধ্যে
মিশে গেলাম। ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম বিহারের ধ্বংসাবশেষ। সূর্য মাথার উপর এসে
পড়াতে গরম বাড়ল। সামিয়া ঘেমে একশেষ।
সামিয়াকে আমি বললাম, আচ্ছা একটা বিষয় খেয়াল করেছ তুমি?
কী?
বলতো এই বিহারটাকে আর ঠিক করা হয়নি কেনো?
কেন?
বিহারটাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন।
তার চাইতে বড় কথা হল, আদি স্থাপত্য ঠিক রেখে এটিকে সংস্কার করতে গেলে দক্ষ লোক
দরকার। সে ধরনের লোক এখনও আমাদের দেশে নেই।
কী বলছ তুমি, দক্ষ লোকের অভাব? আমাদের দেশে এখন কত বড় বড়
আকাশ ছোঁয়া বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে।
নতুন করে বিল্ডিং তৈরি করা আর হাজার হাজার বছরের পুরনো
স্থাপত্যকে সংস্কার করা এক কথা নয়। শালবন বিহার মানব সভ্যতার একটি অংশ, অনন্য
ইতিহাস। এর বুকে লুকিয়ে আছে বহু অজানা ইতিহাস, অদক্ষ হাতে সংস্কার করতে গেলে এর
ক্ষতি হতে পারে। কাজেই সে ঝুঁকি না নেয়াই ভাল নয় কি! এখন যেটুকু টিকে আছে তার
যত্ন নেয়া প্রয়োজন। যেন আর ধ্বংস না হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই বিহার এলাকার
অনেক ক্ষতি হয়েছে।
‘কেন? কেমন করে?’ সামিয়া জানতে চায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রায় চৌদ্দ’শ ব্রিটিশ সৈন্যের ছাউনি
ছিল এই লালমাই ময়নামতি পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে। সামরিক ঠিকাদাররা
সৈন্যদের থাকার জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করার সময় মাটি খুঁড়ে বহু ছোটবড় ইটের সন্ধান
পায়, ঠিকাদাররা কাউকে না জানিয়ে গোপনে বহু ইট মাটির নিচ থেকে বের করে আনে। সেই ইট
দিয়ে তারা সৈন্যদের জন্য ঘরবাড়ি নির্মাণ করে। এতে অনেক স্থাপনা হারিয়ে যায়। তবে
বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে সে সময়কার প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কিছু উদ্যোগ নেয়, তারা
প্রাপ্ত কিছু কিছু নিদর্শন সংস্করণ করে, এর মধ্যে ছিল বিভিন্ন মূর্তি, প্রাচীন
মুদ্রা, চিত্র ফলক ইত্যাদি।
আচ্ছা জয় এই জায়গাটার নাম শালবন বিহার হল কেন?
যে সময় এই বিহারটি খুঁজে পাওয়া যায়, তখন এর চারপাশে ছিল প্রচুর
শাল গাছ, সম্ভবত সেজন্যই এই বিহারটির নাম দেওয়া হয় ‘শালবন বিহার’। এই বিহার ছাড়াও
সেসময় খনন করা হয় কোটিলা মুড়া, চারপত্র মুড়া, রাণী ময়নামতির প্রাসাদ আর মন্দির
মুড়া।
বাকিগুলো কোথায়?
সবই এই লালমাই-ময়নামতির মধ্যে। তবে ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে হওয়ায়
নিরাপত্তার কারণে সবগুলোতে সকলকে যেতে দেয় না।
আচ্ছা জয়, এখন তো বিহারে কেউ নেই, তাহলে জানলে কেমন করে এটি
বারো’শ বছর আগের?
ঠিকই বলেছ তুমি, এতো বছর পর কথাটা আমরা জানলাম কেমন করে?
আসলে এযুগে মানুষ অনেক অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আবিস্কার করেছে। তা দিয়ে পরীক্ষা করে
বলে দেওয়া যায় কোন জিনিস কত আগের। তাছাড়া অনেক নিদর্শন দেখেও সময় আন্দাজ করা যায়।
আচ্ছা আমরা যে এতক্ষণ সিঁড়ি বেয়ে বিশাল একটি বাড়ির মত জায়গা
ঘুরে দেখলাম, ওখানে কি সন্ন্যাসীরা থাকতো?
ওটা আসলে বিহারের কেন্দ্রীয় মন্দির। বৌদ্ধদের প্রায় প্রতিটি
ধর্মীয় স্থাপনার চারদিক দিয়ে সমান এবং বিশাল জায়গা ছেড়ে ঠিক মাঝখানে মন্দির তৈরি
করা হতো। এই মন্দিরে বৌদ্ধমূর্তি রাখা হত। ভিক্ষুরা ধর্ম শিক্ষাকালে এই
মূর্তিগুলোর উপাসনা করত। মন্দিরগুলো নির্মাণ করা হতো ধাপে-ধাপে। প্রথমে বিশাল একটি
জায়গায় মাটি থেকে উচু করে একটা মঞ্চের মত বানানো হতো। তার পরে সেই মঞ্চের চারপাশে
কিছুটা জায়গা ছেড়ে তার ওপর ছোট আকারের আরেকটি উঁচু মঞ্চ তৈরি করা হতো। এভাবে
ধাপে-ধাপে মাঝের অংশ ছোট ও উঁচু হতে থাকত। একধাপ থেকে আরেক ধাপে ওঠার জন্য ব্যবহার
করা হতো সিঁড়ি। প্রতি ধাপেই থাকত কয়েকটা করে ঘর আর চারপাশে ঘুরে দেখার জন্য
বারান্দা। বৌদ্ধরা এই বারান্দাকে বলে প্রদক্ষিণ পথ।
সব শুনে সামিয়ার আগ্রহ বেড়ে গেল। তাই সে বলে উঠল, ‘আমরা আর কী
কী দেখব জয়?’
চলো এবার আমরা সীমানা প্রাচীরর ওপরের দিকটা দেখি। আমি সামিয়ার
হাত ধরে নিয়ে ছোট একটা সিঁড়ি বেয়ে সীমানা প্রাচীরের ওপরে উঠতে থাকি!
সামিয়া বলে, ‘এ দিকটায় তো এসে ছিলাম।’
সে সময় রোদ ছিল বলে ওপরে উঠে দেখিনি। এখন আমরা প্রাচীরের ওপর
থেকে দেখব। ১৬ ফুট চওড়া প্রাচীর এর ওপরে উঠে সামিয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে ভেতরের দিকে
দেখিয়ে বললাম, ‘দেয়ালের ভেতরের অংশে দেখছ না ছোট-ছোট ঘরের পাতা?’
সবই তো ভাঙ্গা দেখছি।
এখন সবই ভাঙ্গা। তবে একসময় এই দেয়ালের ভেতরের দিকে ভিক্ষুদের
জন্য প্রায় ১২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থের মোট ১১৫ টি ঘর ছিল। সীমানা প্রাচীরের
উপর হেঁটে-হেঁটে আমরা দেখতে লাগলাম। একটা সিঁড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম দুজন।
সামিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললাম, ‘এই যে সিঁড়িটা দেখছো না, এটাই হচ্ছে বিহারের
প্রবেশের প্রধান দরজা। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে প্রথমে এই হলঘরে প্রবেশ করতে হতো।
তারপরে ঐ যে দেখছো আরেকটা ঘরের মতো, এই হলঘর হতে ওই হলঘর পর্যন্ত ওপাশের সিঁড়ি
দিয়ে নেমে বিহারের ভেতরে ঢুকতে হতো। এখানে কিন্তু সবার প্রবেশাধিকার ছিল না। কেবল
ভিক্ষুরাই সাধনার জন্য আসতে পারতো বিহারে। এখান থেকে দেখো, সবদিকেই সীমানা
প্রাচীরের ঠিক মাঝখানে কেন্দ্রীয় মন্দিরটি। ওহ্, আসল জিনিসটাই তো দেখা
হয়নি, চলো তাড়াতাড়ি, নইলে যে বন্ধ হয়ে যাবে।’
সামিয়া সাগ্রহে জানতে চাইল, ‘জিনিসটা কি?’
‘ময়নামতি জাদুঘর।’ আমি বললাম।
সূর্যের
তেজ কমে মিষ্টি রোদ ছড়িয়ে পড়ছে। বর্ষার পরে সবকিছু ধূয়ে প্রকৃতি অপরূপ ভাবে
সেজেছে। সব কিছুতেই যেন একটু বেশিই সবুজ ভাব। সবুজের মাঝে হাঁটতে হাঁটতে আমরা
প্রবেশ করলাম পাশের সাদামাটা একটি একতলা ভবনে। টিকেট নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে
দেখি, বড় বড় করে লেখা ‘ছবি তোলা নিষেধ, কোন কিছুতেই হাত দিবেন না।’ কিন্তু, সামিয়া
অবাক হয়ে দেখল সকলেই ছবি তুলছে। কেউ কিছু দেখছে না শুধু ছবি তুলছে। কাচের শো-কেসে
সারি-সারি ছোট বড় মূর্তি, মাটির পাত্র, পোড়া মাটির ফলক, বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা, আরো
কত কী! বিশাল বিশাল মূর্তিগুলো রাখা হয়েছে সামনে। এগুলোকে কাঁচের শোকেসে রাখা
হয়নি। সবাই সেগুলো হাত দিয়ে ধরে-ধরে দেখছে। গার্ডরা টুলের মধ্যে বসে আছে,
কিন্তু কোনো গার্ড কাউকে কোনো কিছুই বলছে না। শেষে আর চুপ করে থাকতে না পেরে
সামিয়া আমার মুখের পানে তাকিয়ে বলল, ‘সবাই ছবি তুলছে, মূর্তিগুলোর গায়ে হাত
দিচ্ছে, কী সব লিখছে! কিন্তু গার্ডরা কিছু বলছেনা কেন?’
আসলে সামিয়া জানো কি! বেশিরভাগ লোকই জানে না এগুলো কত অমূল্য
সম্পদ। তুমি শুনে আরো অবাক হবে এই বিশাল বজ্রযোগিনী মূর্তিটি পৃথিবীতে আর একটাও
নেই? ব্রোঞ্চের এত বড় বৌদ্ধ মূর্তি খুঁজে পাওয়া বিরল। এত বড় সম্পদ আমাদের থাকার
পরও কিন্তু আমরা তার মর্যাদা দিতে পারছি না।
‘অনেক কিছুই তো দেখা হলো, চলো এবার। সবাই সবকিছু নষ্ট করে
ফেলছে। আমার আর দেখতে ভালো লাগছে না।’ সামিয়ার মাঝে বিরক্তির ছাপ।
‘চলো তাহলে, বিকেল ফুরিয়ে এলো, বোধ হয় এখনই পশ্চিম আকাশে গোধূলি
নামবে, এখনি হয়তো জাদুঘর বন্ধ করে দেবে। অন্য দিন না হয় এসে তোমাকে লালমাই পাহাড়
দেখাতে নিয়ে যাব।’
দু’জনে হাত ধরে বিহার প্রাঙ্গন হতে ধীরে-ধীরে পা ফেলে বেরিয়েই শালবন বিহারের ঠিক অপর পাশেই রয়েছে বৌদ্ধদের বিশ্ব শান্তি প্যাগোডা, খানিক সময় সেখানে ঘুরাঘুরি করে, চলে এলাম রাজপথে। বিশ্বরোডের পাশেই ছিল হোটেল নুরজাহান। দু’জন সেখানেই উঠলাম রাত্রি যাপনের উদ্দেশ্যে। রাতের খাবার শেষে শুতেই সারাদিনের ক্লান্তি জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম দু’জন। এক ঘুমে সকাল। ঘুম থেকে উঠেই বাসযোগে সোজা ঢাকা। ঢাকা থেকে নিজ গন্তব্যস্থান জাজিরা, শরীয়তপুর। দু’জন মিলে সহি সলামতে পৌঁছে গেলাম।