একগুচ্ছ কবিতা :: ইব্রাহিম খলিল

একগুচ্ছ কবিতা :: ইব্রাহিম খলিল

ভাত

নিতান্তই দুমুঠো ভাতের জন্য

এই শহরে আসা;

বাবার উঠান, ঝিঙ্গে ফুলের মাচা

ফেলে আসতে হয়েছে মুহূর্তেই।

 

এখন আমার প্লেট জুড়ে চিকন চালের সাদা ভাত

মুক্তো দানার মতোই চকচক করে।

 

কিন্তু ফেলে আসা বাবার উঠানের ঘাসগুলো

এখন বড্ড ফ্যাকাসে হলুদ বিবর্ণ!

 

আভিজাত্য

অন্যের ডাইনিংয়ে সাজানো আপেল দেখে ভেবো না

তারা প্রতিদিনই আপেল খায়।

তারা মূলত চকচকে আপেলের শরীরে

আভিজাত্যের চাষ করে।

কুঁচকে যাওয়া শার্টের মতোই বাহারি ঝুড়িতে বসে বসে

সবুজ সতেজ আপেলগুলো কোমলতা হারায়।

প্রতিদিনই কাজের মেয়েটি জিহ্বার জল সংবরণ করে

আলতো করে মুছে যায় আপেলের সোহাহি শরীর।

কারো মুখে না উঠলেও সপ্তাহ শেষে

আপেলগুলোর জায়গা হয় কোন এক ডাস্টবিনে।

এভাবেই তারা আভিজাত্য পোষে

লাখ টাকার ডাইনিং টেবিলে।

যেমন করে ড্রয়িং রুমের কোণে

এ্যাকুরিয়ামে পোষে চকচকে গোল্ড ফিস।

সমুদ্রের জলে বেড়ে ওঠা মাছগুলোর

শৈশব কেড়ে নেয় কাঁচের এ্যাকুরিয়াম।

তারা এভাবেই প্রতিদিন চলনে বলনে আভিজাত্য মাখে

নিজেকে অন্যের চাইতে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে।

অথচ

সাড়ে তিন হাত মাটি গিলে খায় আভিজাত্য।

 

আশাবাদী এক ন্যানো সেকেন্ড 

ভেঙ্গে যাওয়া কাঁচের গ্লাসটা জোড়া লাগবে না জেনেও

টুকরোগুলোকে আমরা বার বার

জুড়ে দেয়ার বৃথা চেষ্টা করি।

এই ভেঙ্গে যাওয়াটা চোখ মেনে নিলেও

মন মেনে নিতে পারে না কোনভাবেই।

তাইতো জুড়ে দেয়ার বৃথা চেষ্টা করে যাওয়া।

ফিরে আসবে না জেনেও

আমরা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি

চলে যাওয়া মানুষটির দূরুত্ব বেড়ে যাওয়া পথের দিকে।

যতক্ষণ না দৃষ্টির আড়াল হয়, ঠিক ততক্ষণ

মন তাকে চলে যাওয়ার ছাড়পত্র দেয় না।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী ফাঁসির রায় শোনার পরেও

আটকে দেয় চোখের পানি,

রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে বলে।

অথচ

আমরা মানুষেরা প্রতি মুহূর্তে বেঁচে থাকি 

এক ন্যানো সেকেণ্ডের আশাকে পুঁজি করে।

 

কালো চুলের শোক

বিকেল হলেই সেই মেয়েটি আলতা মেখে পায়

দুইটি বেনি ঝুলিয়ে কাঁধে এদিক সেদিক ধায়

ঠিক মায়াবী হরিণ যেমন

হন্যে হয়ে ছোটে

মিষ্টি হাসি ঠোঁটে

প্রজাপতি জোটে

সেই মেয়েটির হাসির আলোয় জুঁই চামেলি ফোটে।

 

শান্ত ছেলে বাসতো ভালো সেই মেয়েটার চুল

একটি নজর দেখতে তারে কী যে হুলস্থুল

এত্তো কিছু থাকতে কেন

পড়লো চুলেই চোখ

বলবে কী যে লোক

যা হবার তাই হোক

সেই ছেলেটির মনের ভেতর কালো চুলের শোক।

 

চোর

হাত পা ধুয়ে তওবা করে চোর হয়েছে সাধু

তাইতো এখন চোর পাবে না তেলেসমাতি যাদু।

আগের মতো সিঁদ কাটে না বলছি কথা খাঁটি

চোরগুলো আর কষ্ট করেগায় মাখে না মাটি।

 

পাল্টে গেছে চুরির ধরণ কাটে না আর বেড়া

পড়লে ধরা আগের মতো কেউ করে না ন্যাড়া।

দশ বাড়িতে চুরির রীতি ছ্যাঁচড়ামি এক কাজ

তাইতো চোরে চুরি ছেড়ে রাজনীতিতে আজ।

 

সুদিন আসে কম সময়ে গায় জড়ালে কোট

এমন নেতা হতে গেলে নেই প্রয়োজন ভোট।

পেছন দিকের রাস্তা দিয়ে অন্দরে যায় ঢোকা

ধান্দাবাজির মারপ্যাঁচেতে হয় জনগণ বোকা।

 

সরকারি মাল চুরি সহজ কে রাখে তার খোঁজ

তাইতো চোরে নেতা হয়ে করছে চুরি রোজ।

রক্ত পানি ঘামের শরীর দিন আনে দিন খায়

সেই অভাবীর ভাগের চালটা চোরের ঘরে যায়।

 

ক্ষুধায় কাঁদে গরীব দুঃখীশরীর তাদের উদাম

চোর নেতাদের ঘরের মেঝে চুরির চালের গুদাম।

সরকারি চাল বিক্রি করে পকেট ভরে চোর

পেটের জ্বালায় দিনমজুরের চোখে লাগে ঘোর।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন