একটি দীর্ঘ কবিতা : ময়নুল ইসলাম

একটি দীর্ঘ কবিতা : ময়নুল ইসলাম

ভোটের অধিকার চাই

আজকাল বেশ ভালোই রাজনীতি বুঝি !

রাজনীতি কলা অনুষদের 

কোনো সাধারণ পাঠ্য নয় !

এটি সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণালব্ধ 

অন্যান্য বিদ্যার মতো বিজ্ঞানমনস্ক 

শিক্ষাথীদের ভালোলাগা এবং ভালোবাসার সুপাঠ্য বিষয় ! 

 

সামাজিক বিজ্ঞানকে অলংকৃত করতে 

পৌরনীতির ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসায় 

সক্রেটিস-প্লেটো-এরিস্টটল থাকে আমার বুকপকেটে !

আমি হরহামেশা,

হবস-লক-রুশো-ম্যাকিয়াভেলীর প্রতি অগাধ ভক্তি  

রেখে তাঁদের উক্তি আওড়াই সভায়-সেমিনারে !

 

আমি একটি আদর্শ রাষ্ট্রের রূপরেখা 

বুঝতে বুঝতে দিনাতিক্রমের সাথে সঙ্গতি 

বজায় রেখে বোধ করি ক্রমশঃ হয়ে পড়েছি,

আজ মস্তবড় বকধার্মিক বা সামাজিক বোঝা !

 

রোজ সকালে চোখ খুলে দেয়ালে ঝুলন্ত মানচিত্রে, আমি

দেখতে পাই একটি সবুজ সমারোহের ভূখণ্ড !

আমি নগরে-পথে-ঘাটে নানাবিধ নাগরিক 

সম্প্রদায়ের মুখায়ব দেখে, 

বহু কষ্টে চিনি আমার সোনার বাংলার স্বকীয় স্বরূপ ! 

 

একদা আমি নিয়মিত বিরতিতে ভোট প্রদানের দিনে,

বিশেষ ভাবে পুলকিত হতাম নিভৃতচারী নাগরিক মনের

গহীনে গোপনীয় এবং মূল্যবান মতামত প্রদানের মাধ্যমে 

সরকার নির্বাচনের নানাবিধ কর্মযজ্ঞে ! 

 

আধুনিক বিশ্ব, 

আমজনতার অংশগ্রহণমূলক ক্ষমতা চর্চার 

এই অমূল্য মধ্যমকে অকুন্ঠ সমর্থন করে 

বিশ্ববাসীকে করেছে উৎসাহিত !

 

আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভক্ত বলে, 

সার্বভৌমত্ব বুঝি, আধুনিক রাষ্ট্রের সংজ্ঞা জানি;

রাষ্ট্র সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য-তত্ত্ব, 

তার বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্ব-কর্তব্য-ক্ষমতা 

এবং পারস্পরিক সম্পর্ক বুঝে,

ভ্যাট-ট্যাক্সের বোঝা মাথায় নিয়ে 

সম্পদের অসম বন্টনের কষ্ট বুকে চেপে 

নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারি আজ নিজে নিজেই !

 

আমি প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের রাষ্ট্র চিন্তার 

ইতিহাসের অনুপুঙ্খ জেনে এবং বুঝে 

কিছু কিছু আইন প্রণেতাদের বাগাড়ম্বরের 

মাত্ৰার নির্ভুল নির্ণায়ক হলেও;

আজ অবধি কোনো রাষ্ট্রীয় বিধিমালা প্রণয়নে

মতামত প্রদানের বিন্দুমাত্র সুযোগ আসেনি আমার হাতে ! 

 

আমি অবসরে বই পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে, 

পড়া থেকে পরিত্রানের উপায় 

জানার জন্য আজকাল পড়ছি 

বৃহৎ কলেবরের বিভিন্ন বইগুলো ! 

 

বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে, এখন 

আমার কৃত্রিম যৌনতায় জরাগ্রস্ত আঙুলের 

নিঃশ্বেষিত শক্তিতে যা আছে- 

তা হলো যাচ্ছেতাই একটি নির্বাচনের 

ব্যালট পেপারে শুধু টিপসই প্রদানের অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং 

অবশিষ্ট্যাংশ ক্ষমতা প্রয়োগের সর্বশেষ অধিকার ! 

 

নাগরিক সমাজের হৃত অধিকারসমূহের 

মধ্য হতে এই বিশেষ অংশটুকু চর্চার 

অভূতপূর্ব আনন্দটুকু রক্ষার্থে, আমি

ফিরে পেতে চাই আমার ভোট আমার স্বীয়হস্তে 

প্রদানের ব্যক্তিগত অধিকার !

 

রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যায়ন করতে যেয়ে, আমার 

জানা হয়েছে অর্থনীতির মৌলিক নীতিমালা ! 

পঠিত বিভিন্ন বইয়ের অর্জিত জ্ঞানে,

অর্থনীতির তত্ত্ব উদ্ঘাটনের মাধ্যমে নোবেল 

অথবা অন্যান্য কোনো স্বীকৃতি না পেলেও

আমি মূল্যস্ফীতি-অর্থের অবমূল্যায়ন-চাহিদা-অভাব, 

মাথাপিছু আয় নির্ণয়ের গলধঃকরণকৃত সূত্রগুলো 

হড়বড় করে বলতে পারি চোখ বন্ধ করে !

 

আমি এখন মানব জন্মরহস্য সম্পর্কিত-

নৃবিজ্ঞান বুঝি, সমাজ এবং সামাজিক স্তরায়ণ বুঝি !

টেন্ডার বাণিজ্য-টেকসই উন্নয়ন-টাকশালের 

অব্যবস্থাপনাপরিপূর্ণ সু-ব্যবস্থাপনা বুঝি ! 

আমি বাণিজ্য বুঝি, উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত এবং 

বিত্ত-বৈভবহীনতার জরাজীর্ণ সংসারকে বুঝি ! 

 

আমি চিরাচরিত ত্যাগের মেকী মহিমা প্রদর্শনের 

মাধ্যমে সাম্ম্রাজ্য ভোগের ভোজ সভাগুলোর 

সদস্যবৃন্দের অতি দ্রুত স্বস্ব ভাগ্য পরিবর্তনের ফর্মুলা বুঝি ! 

 

আমি মিথ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন বুঝি, 

কূটকৌশলের নানাবিধ ইন্ধন বুঝি, দূরবীসন্ধি বুঝি, 

প্রেম-বিরহ-প্রতারণার পংকিলতাগুলো  

অত্যন্ত পরিস্কার ভাবে বুঝি !

 

আমি দর্শন বুঝি,

ভূগোল-সাহিত্য-নন্দনতত্ত্ব ভালোভাবে বুঝেও  

প্রকৃতবিদ্যা অর্জনের অহেতুক বদান্যতায় 

এবং অবাধ সংস্কৃতির উদারতায় শুধু একটি  

প্লবকের মতো নাচতে না জানায়, আমি 

পড়ে থাকি প্রত্যন্ত গ্রামের-

ছন-ছাউনি দেয়া-খড়ে ঘেরা-ঘরে !

ঝুম বর্ষায় অথবা প্রচণ্ড খরায়,

আমার ভাঙা ঘরখানি বিরহী মনের মতো অস্থির হয়, 

বুক ধড়ফড় করার মতো থর থর করে নড়ে !

 

এত এত জ্ঞানার্জন সত্ত্বেও 

বিভিন্ন সরকারী সফরে,

অথবা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের 

সভাগুলোর কোনো আমন্ত্রণপত্র আসেনা আমার ঘরে ! 

 

অথচ আমার পাসপোর্টের 

প্রতিটি পাতায় পাতায় অভিজ্ঞতা 

আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভিসা অমোছনীয় 

কালি আর চীরস্থায়ী আঠায় সাঁটা !

কেউ জানেনা, শুধু স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই, বিশ্বগ্রামের এই

প্রত্যন্ত প্রান্তে আমার পরম আগ্রহভরে একা একাই হাঁটা !

 

আমি কোনোদিন এমন প্রকাশ্য অশ্রদ্ধায়,কিছুই মনে করিনি !

একদিন আমার সমাবর্তনের দিনে,

বিশ্বাবিদ্যালয়ের আচার্য মহোদয় 

কালো গাঊন পরিধান করে যখন জ্ঞানের স্বীকৃতির সনদ

আর একটিমুকুট দিয়েছেন মাথায়, ঠিক সেইদিন, 

আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে  

উপাচার্য মহোদয়ের পায়ে হাত ছুঁয়ে সালাম ঠুকে 

মঞ্চের বাহিরে এসে গলা ফাটিয়ে দিলাম চিৎকার, 

 

শোনো বন্ধুগণ !

আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করা 

এক টগবগে যুবক !

 

উপস্থিত সবার বিস্মিত দৃষ্টি মুহূর্তে এলো আমার দিকে !

 

আমার বলিষ্ঠ কণ্ঠ আরেকটু উচ্চতায় নিয়ে 

পেশীবহুল হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে শূন্য আসমানে ভাসিয়ে বললাম, 

বন্ধুগণ !

আমি এই বাংলায়

লর্ড ক্লাইভ-ইয়াহিয়া-জিন্নাহ কে চিনি !

আমি মাওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা 

এ কে ফজলুল হককে চিনি ! আমি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহম্মেদ

মোহাম্মদ মনসুর আলী, আবুল হাসনাত, মোহাম্মাদ কামরুজ্জামান কে চিনি ! 

 

আমি রফিক-শফিক-সালাম-বরকতকে চিনি !

 

তারপর আমি নিঃস্বাস ছেড়ে দিয়ে 

দীর্ঘ দম টেনে বুকে বাতাস ভরিয়ে বললাম,

 

প্রিয় বন্ধুগণ !

আমি শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আবু সাঈদ চৌধুরী,

মোহাম্মদউল্লাহ, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম,

জিয়াউর রহমান, আবদুস সাত্তার, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ,

আ ফ ম আহসানউদ্দিন চৌধুরী, শাহাবুদ্দিন আহমেদ,

আবদুর রহমান বিশ্বাস, ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ,

মঈন উদ্দিন আহমেদ, জিল্লুর রহমান, আবদুল হামিদ কে চিনি !

 

প্রাণপ্রিয় বন্ধুসব !

আমি বঙ্গবন্ধু সেতু দেখেছি,

পদ্মা সেতু দেখেছি ! 

আমি ফ্লাইওভারগুলো দেখেছি !

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দেখছি...

 

আমি ধানের শীষ ভর্তি ভাসমান নৌকায় চড়ে 

দীর্ঘ একচল্লিশ বছর যাবৎ ভাসছি 

আপনাদের প্রাণপ্রিয় এই সোনার বাংলায় ! 

 

আমি ন্যায়ের দাঁড়িপাল্লা হাতে 

সুষম সম্পদের সমবন্টনের চিন্তা মাথায় রেখে;

 লাঙ্গলের ফলায় ভূমি কর্ষণে নানাবিধ বাধা-বিঘ্ন 

পেরুতে পেরুতে আমি আমার জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে, 

অবহেলা-হিংসা-দ্বেষ-অহমিকা-উপেক্ষার পাহাড় ডিঙিয়ে 

একটি রমণীকে ভালোবেসেছিলাম ! 

 

একজন কৃষ্ণকায় কদাকার যুবকের মুখে 

ভালোবাসার কথা শুনে সমাবর্তনে 

উপস্থিতির সবাই উৎসাহ আর উদ্দীপনায়

তাকিয়ে রইলো আমার মুখে...

 

আমি কণ্ঠ নামিয়ে বলতে থাকলাম,

আমি একটি রমণীকে ভালো বেসেছিলাম...

আমি একটি অত্যন্ত প্রিয় রমণীর হাতে হাত রেখে

বসে থেকেছি সাভারের স্মৃতি সৌধে, শহীদ মিনারের পাদদেশে,

সোহরাওয়ার্দী উদ্দ্যানে,অপরাজেয় বাংলায়,

টিএসসিতে, সোপার্জিত স্বাধীনতার বেদীমূলে ! 

 

আমি ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের সামনে বসে

প্রিয়তমার চোখে চোখ,

হাতে হাত, হৃদয়ে হৃদয়, জীবনে জীবন ছুঁয়ে পেয়েছি 

রাজ্য জয়ের আয়েশী এক অনাবিল প্রশান্তি ! 

 

আমি একটি প্রিয় রমণীর

ভালোবাসায়-ভালোলাগায় মুগ্ধ হয়ে 

বিতর্কিত তসলিমা নাসরীনকে মনে মনে বুকে জড়িয়ে ধরেছি 

শুধু সে রুদ্রকে অত্যন্ত ভালোবাসতো বলে ! 

 

আমি হুমায়ুন আজাদ কে 

গালি দিতে দিতে মুখের ফেনা তুলেছি;

তাঁর নারীর অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য !

আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম 

নির্মলেন্দু গুনকে খুজেঁছি আমার পরম প্রেয়সীর জন্য 

একটি প্রেমের কবিতা লিখে নিতে !

 

আমি কলিকাতায় গিয়ে,

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মহাশয়ের পা ধরে 

বসেছিলাম এক শতাব্দীকাল, শুধু আমার প্রিয়তমার 

সুগন্ধি বুকের সুনিপন বর্ণনা লিখে নিতে !

 

আমি আমার প্রিয়তমার 

বাড়ির চৌহদ্দীর নির্মল প্রকৃতির নিখুঁত 

বর্ণনা লেখার কৌশল শেখার অদম্য ইচ্ছায় 

বিভূতিভূষণকে পড়তে পড়তে চরম আনন্দের আতিশয্যে 

মরে গিয়ে পড়েছিলাম একটি 

ধূসর ঝরা পাতা হয়ে নির্জন অরণ্যে ! 

 

কোনো এক বসন্তে,

বিভিন্ন প্রাণীর-পাখির-প্রজাপতির কলতানে,

পুনর্জন্ম হয়েছে আমার !

আমি আরেকবার প্রাণ ফিরে পেয়ে, সেই 

প্রিয় রমণীর প্রেমে পড়েছি আ-বা-র ...

 

দ্বিতীয়বার অশরীরী প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে,

তাঁর একটি যুৎসই নাম প্রদানের জন্য 

জীবনানন্দকে স্বপ্নের মধ্যে একটিবার দেখবার আশায় 

কতদিন 'রূপসী বাংলা' বইটি বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি !

 

অথচ এক কাক ডাকা ভোরে, আমার প্রিয়তমা 'মালবিকা' 

আমায় ঘুম থেকে ডেকে তুলে 

কোনো ঐতিহাসিক পটভূমি ছাড়াই, জানালে 

"বন্ধু, চিরবিদায় ! আমি বিদেশ যাচ্ছি চলে,

অন্য কারোর হাত ধরে" !

 

প্রিয় বন্ধুগণ, বিশ্বাস করো,

সেদিন আমি মুহূর্তে হয়ে পড়েছিলাম 

অচ্ছুৎ-অপ্রেমিক-হিংস্র-পাশবিক-

রক্তে-মাংসের একটি মানবিক অমানুষ !

 

আমি দিক্বিদিকজ্ঞানশূণ্য হয়ে,

চিৎকার করে এ.কে. আজাদ চৌধুরীর 

দপ্তরে ঢুকে পড়েছিলাম বিনা নোটিসে ! মাননীয় ভিসির 

টেবিল থাপড়ে বলেছিলাম, এটি চরম অন্যায়,স্যার, 

আমার এ অন্যায়ের সুবিচার দরকার...!

 

আমি আমার প্রেম হন্তারকের ছবি 

গলায় ঝুলিয়ে ঘুরেছি 

প্রভোস্ট-প্রক্টর মহোদয়ের দ্বারে দ্বারে !

আমরণ অনশন করেছি 

অপরাজেয় বাংলায়, প্রেসক্লাবে, রমনার বটমূলে !

 

আমি সুবিচারের জন্য উন্মাদের মতো ছুঁটেছি, 

সমাধানের সম্ভাব্য সকল স্হানে !

একদিন টি.এস.সি অডিটোরিয়ামের সাংস্কৃতিক 

সন্ধ্যার আয়োজন স্থগিত করে, আমি 

বঙ্গবন্ধুর মতো আঙ্গুল উঁচিয়ে বলেছিলাম,

 

প্রেমে যখন পড়েছি, এই প্রেম থেকে 

আমি উঠতে চাইনা আর !

আপনারা জানেন, 

এই প্রেম বিনির্মাণে আমি সময় দিয়েছি,

মেধা-শ্রম-ভালোবাসা দিয়েছি, চুম্বন দিয়েছি, 

আমি স্পর্শ দিয়েছি, আমি কষ্ট দিয়েছি,

আমি কষ্ট পেয়েছিও অ-নে- ক !

আমি বারংবার বলছি, 

আমি প্রেমে পড়েছি এবং কোনোভাবেই এই প্রেম থেকে 

আমি উঠতে চাইনা আর !

 

আমি শুইতে চাইনা,

কোনো স্নিগ্ধ স্পর্শ চাইনা, মিষ্টি চাহনি বা চুম্বন চাইনা !

হাত ধরতেও চাইনা কোনোদিন আর ! শুধু 

প্রেমে যেহেতু পড়েছি,  

এই প্রেম থেকে উঠতে চাইনা আর !

 

আমি আরাম কেদারা চাইনা,

পিঁড়ি চাইনা, রাজসিংহাসন চাইনা !

শুধু ক্যাম্পাসের সবুজ ঘাসে বসে, আমার- 

প্রিয়তমার শরীরের গন্ধমাখা আঁচল 

এই চীরবিরহী হৃদয়ে বিছিয়ে, তাঁকে 

আমরণ জড়িয়ে ধরে বাঁচতে চাই ... 

 

প্রিয় বন্ধুগণ, 

একজন উন্মাদ প্রেমিকের প্রলাপ শুনে,

সেইদিন অডিটোরিয়ামের দর্শকগণ 

শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেছে আমার দিকে ! 

কেউ কেউ এক পা দু'পা করে সরে পড়েছে 

সেই টি.এস.সি অডিটোরিয়ামের সাংস্কৃতিক সভা থেকে !

 

বন্ধুগণ,

আমি দেখেছি সাদা ধবধবে চামড়ার রমণীরা  

এক এক করে উঠে গিয়েছে আমার চেয়েও 

অধীক কৃষ্ণকায় প্রিয় তরুনের হাতে হাত রেখে !

আমার আকুল প্রেমের উদাত্ত আহ্বানে,সেইদিন

কোনো প্রেমিক যুগলের কোনো সাড়া মিলেনি !

 

বন্ধুগণ, 

আজ সমাবর্তনের সনদ প্রাপ্তির 

এই মহতী দিনে আবেগের গতির বাঁধ ভেঙে 

হৃদয় হতে উপচে পড়লো আমার তরুণ বয়সের 

ব্যর্থ প্রেম কাহিনী 

 

এভাবেই আমার আ...র প্রেম হয়নি ! 

জীবনে আমার আর কোনো সংসারও হয়নি ! 

 

আমি রাজনীতি-সমাজনীতি-অর্থনীতি সহ 

সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অবাধ  

বিচরণে ব্যস্ত থাকায়- মনোবিজ্ঞান বরাবরই 

হয়েছে উপেক্ষিত ! তাই আমার

জীবনে আর কোনো সংসার হয়নি ! 

 

সামাজিক বিজ্ঞান অধিক অনুধাবনের 

রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক স্বীকৃতি না থাকলেও 

কোনো দুঃখ নেই আমার জীবনে ! আমি 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ বগলদাবা করে, 

প্রেমে পড়ায় ইস্তফা দিয়ে, কিছু না বুঝেই  

বই পড়তে শুরু করেছিলাম ! পড়তে পড়তে পড়তে 

ক্লান্ত হয়ে আমি পড়া থেকে পরিত্রানের উপায় জানার জন্য

আজও পড়ছি বৃহদাকারের বিভিন্ন লেখকের দুঃখ-কষ্ট- 

বিরহ-যাতনা-বঞ্চনার মলাটবদ্ধ বইগুলো ! 

 

জীবন সাজাতে নয়; শুধু নিজেকে বাঁচাতে,

কারোর একান্ত ভালোবাসায় মিশে যেতে-

আমি বহুবার পড়েছি সুন্দরী রমণীর রোষানলে !

সৌন্দর্যের একনিষ্ঠ-পরম-পূজারী বেশে 

অপহৃত হয়েছি আমি পৃথিবীর প্রেম মণ্ডপ হতে !

 

আমি বারংবার তাদের বলেছি,

আমার মনে প্রেম-গান অথবা কবিতা নেই !

আমি নিছক পাঠক,

আমি কবি নই, কোনো-

মধুর মিলনের প্রাপ্তিযোগ নেই আমার হস্তরেখায় !

আমি আছি সকল অনাসৃষ্টি আর বিরহীর চরম বিয়োজনে !

 

রমণীগণ খেলাচ্ছলে, হাসতে হাসতে 

চেয়েছে কিছু কবিতা আমার কাছে! তাঁদের-

সুললিত কণ্ঠের কলতানে মোহাবিষ্ট করে,  

করেছে অপহরণ, তাঁরা আমায় 

আটকে রেখেছে অদৃশ্য আদর-স্নেহ-মায়ার অচলায়তনে !

 

এক একজন রমণী এক একটি কবিতার জন্য,

উঠতে বসতে করেছে আমায়-

অমানবিক মানসিক অত্যাচার !

 

একদিকে কাশফিয়া অন্যদিকে 

সাদিয়া জেরিন দাঁড়িয়ে বন্ধ করেছে-

আমার দৈনন্দিন গমনাগমনের মসৃন পথ ! মায়াবী মুনমুন 

মৌমাছির মতো কবিতা, কবিতা, কবিতার গুনগুন গুঞ্জনে-

মুখরিত করেছে আমার চারিধার ! 

 

আমার অত্যধিক প্রিয়, শেষ আশ্রয়স্থল-

প্রাণাধিক ফারজানা শারমিন থেকেছে বরাবর নিরুত্তর ! 

অন্যদিকে আশার ফাঁসিকাষ্টে ঝুলিয়ে

খিল খিল করে হেসেছে হালিমা আখতার ঝর্ণা ! 

 

আমি চিৎকার করে বলেছি 

আমি কবি নই, লেখক নই !

কোনোদিন কিচ্ছু লিখিনি...

আমি অনেকদিন কলম ধরিনা... কিছুই লিখিনা !

 

আমি গীতিকার নই, লিখিনি কোনোদিন

একটিও গান ! শুনে অবিশ্বাস আর উপেক্ষার 

হাসি হেসেছে তানজিনা আখতার লিপি !

অট্টহাসিতে যুক্ত হয়েছে পরমা-তাবাসসুম-মায়মুনা ! 

 

একদিন নুরজাহান আখতার নুপুর,

সুন্দরী-সুকেশী শাহরীনকে নিয়ে এসেছিলো কাছে ! 

হাতে স্নেহের পরশ বুলিয়ে সুহাসিনী ফারিন আর নাজিয়া 

হাতে তুলে দিয়েছিলো আমায় একটি প্রস্ফুটিত ডালিয়া !

 

সেই থেকে আমি মায়া-প্রেম অথবা 

ভালোবাসাকে দিয়েছি ছুটি !

সব ভুলে প্রাণখুলে ভূমি কর্ষণ করে 

ফুলে ফুলে মঞ্জুরিত করে তুলেছি 

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের প্রেমিক যুগলের 

প্রেমময় ফুলেল জীবন !

 

কিন্তু আজ হটাৎ

এ কী শুনছি আমি ?

আমি রাজনীতি বেশ ভালো মতো 

বুঝলেও অধীক অনুধাবনের জন্য কোনো-

স্বীকৃতি না থাকায় কোনো দুঃখ অথবা 

বিন্দুমাত্র গ্লানী নেই আমার ! 

 

আমি স্বীয় যোগ্যতা প্রদর্শনের মাধ্যমে 

এই স্বাধীন বাংলাদেশের নির্বাচনে 

কোনো সংসদ সদস্যপদের মনোনয়ন 

 অথবা বিশেষ কোটার মন্ত্রিত্ব চাইনি !

 

আমি শুধু চেয়েছি,

একটি যাচ্ছেতাই নির্বাচনের ব্যালট পেপারে 

টিপসই প্রদানের আমার অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং 

অবশিষ্ট্যাংশ ক্ষমতা প্রয়োগের 

একান্ত ব্যক্তিগত নাগরিক অধিকার ! 

 

এ বিশ্ব, এ রাষ্ট্র, এ সমাজ এ নগর আমার 

কেড়ে নিয়েছে প্রায় সকল মৌলিক অধিকার, 

একটি একান্ত ব্যক্তিগত প্রেম-ভালোবাসা-সংসার 

গঠনের স্বপ্ন-সাধ-স...ব !

 

আমার অপহৃত অধিকারসমূহের 

মধ্য হতে এই বিশেষ অংশটুকু চর্চার 

অভূতপূর্ব আনন্দের অবশিষ্ঠাংশ সংরক্ষণর্থে,

জীবন সায়াহ্নের শেষ নির্বাচনে আমার 

একান্ত ব্যক্তিগত ভোট প্রদানের অধিকারটুকু 

আমি সবিনয়ে তোমাদের নিকট আজ এখনই ফেরত চাই !

 

২৯ /১২/২০২৩, মোহাম্মদপুর সন্ধ্যা, ০৮:৩০







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন