শিশির আজম এর একগুচ্ছ কবিতা
পয়গাম পাঠালেন বেগম সাহেবা
একান্তে শুনতে চান আমার কালাম
কবি আমি সামান্যই। তুলনায় কিছুই না
আমার কালাম
বেগম সাহেবা রেশমী কাপড়ে লুকোতে না পারা তার
যেমন উতলা স্তন আর
সুগোল নিতম্ব নিয়ে দাঁড়ালেন এ-অধম কবির সামনে
আমার কৈশর শেষ হয়ে যায়নি এখনও। ঠোঁটের ওপর
সামান্যই লোম। তবে কামকলা শিখিয়ে নেয়াটা
যে কোন নারীর কাছে শায়ের লেখার চেয়ে সোজা
বিশেষত তিনি যদি নবাব রইচের কামুক স্ত্রী হন
একজন রমনীর শরীরে এভাবে আমি
একটা ভূমিকা রাখার প্রথম অধিকার লাভ করি
আমি তার ওষ্ঠে মধু ঢালি
স্তনে কামড় বসাই
জিভ ঘসি দু-ঊরুর ফাঁকে, উত্তেজনা চরমে উঠলে
বিছানায় ফেলে ভিতরে প্রবিষ্ট হই
এভাবে আমার কালাম লেখার দিন বদলায়
প্রবল শ্রান্তিতে নুয়ে প’ড়ে বেগম সাহেবা মুগ্ধ
—সোবহান আল্লাহ!
গুবরে পোকা
এক সকালে কাফকা দেখলো অ গুবরে পোকা
হয়া গেছে
ব্যাপারটা এতোই স্বাভাবিক আর সাধারণ
যে এইটা নিয়া ভাববার দরকার আছে বইলা
মনে হইলো না
অর কাছে
তারপর কাফকা যেদিন মারা গেল
কেউ টেরই পাইলো না
কেন না গুবরে পোকাদের মৃত্যু
তেমন আহামরি কিছু না
যা হোক আমাদের মৃত্যু নিয়া আমরা ভাবিত
খুবই ভাবিত
জীবন নিয়া শংকা বা ভালবাসা নাই
আমাদের
আমরা তো গুবরে পোকা না
কেঁচো না
কী
এইটা কে বলে দেবে
ইবলিস
স্বর্গের
খুব কাছে
পৃথিবী
ইবলিস জানতেন
ঈশ্বর
কী
ইবলিস ছাড়া
আর কার পরিষ্কার ধারণা ছিল
মানুষ
ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি
পৃথিবী
মানুষের জগৎ
ঈশ্বরের প্রিয়পাত্র
ইবলিস
পৃথিবীতে এলেন
মানুষের কি
দাসত্ব মানায়
আস্তিকের গান
যে শবদেহগুলো তুমি কাঁধে নিলে তার মধ্যে একটা হলো তোমার বোনের, তোমার
জন্য যা বেশ ভার—বেগুনি আকাশে তারাগুলো নির্ঘুম, যেমন ঐ পেঁচা, আর ঐ
মুন্ডুহীন পুলিশ—চেনা মুখ পুনরুদ্ধার ভিন্ন ভিন্ন প্রতীকে
অদ্ভুত উন্নতিকণাগুচ্ছ হতে গভীরতায় হাত মেলাতে ধাক্কা
উপকূলীয় স্রোতের ওজনহীন ঘূর্ণনে আমরা প্রকাশ করেছি আমাদের নগ্নতা, যা
বাঁচিয়ে দেয় সম্ভাব্য মৃত্যু হতে—অলিখিত কবিতার কালি সৃষ্টি করছে প্রকরণহীন ভাষা
বসন্তের প্রতারণার ভেতর ক্ষুধা বাড়ছে; আর ঐ লতাগুল্মে জড়ানো বুনো হাঁসের পথ
সব নদীই এক—গ্রামগুলোকে ছুঁয়ে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, ভাসমান খড়কুটো
ও কাকের ডানা ফিরিয়ে আনে বেহিসাবী পূর্বসুরীদের—আদিবাসী পলিনেশীয়রা
রাতে যেভাবে তাদের কুকুরগুলোকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতো
দ্বীপপুঞ্জের বহমান ধ্বনির ঝাঁপটানি সংক্রমিত আমার উত্তরাধিকারে
আর ভাস্কর্যের অমসৃণতা, ধোয়ালেও সরলতা নষ্ট হবে না
এই ঘাস আমাদের—এই ঘাস সবুজ, এই ঘাস সাদা ও লাল এবং
অবশ্যই কালো, বাকি সব ভুলবোঝাবুঝি
স্বীকার করছি আমি দায়ী; অন্যদের ক্ষেত্রে এর কী রকমফের হতে পারে তা তো
সবার জানা; এমন কেন হবে যে আমার লোমশ বুক অন্যের জন্মবার্ষিকীকে ব্যাঙ্গ করছে
কালো উপত্যকা জুড়ে উড়ে বেড়ানো হাওয়ায় সহজ সৌন্দর্য উপলব্ধির পূর্বে দরকার
টাটকা ঘুম—নিখুঁত রক্ত, একে মিশিয়ে নাও রক্তজবায়
হ্রদ হয়ে উঠবে আরো গভীর, প্রতিজ্ঞ ও প্রতিধ্বনিময়
আমি আদৌ বিদ্বেষী নই, আমি আস্তিক
ভালো থাকবার ব্যাপারে মারাত্মক অনীহা এমন লোকজন জগতে আছে
ভাল থাকতে চাওয়াটা তো
ভালই,
এর ভিত্রে অন্য কিছু খোঁজার
মানে নাই।
কে
না চায়
ভাল থাকতে?
পুরুষ কী চায়?
গাড়ি বাড়ি আর মাইয়ালোক।
মাইয়ালোক কী চায়?
গাড়ি বাড়ি আর পুরুষ।
অর্থাৎ বেশিরভাগ মানুষের চাওয়ার জায়গাগুলাতে
ভিন্ন কিছু নাই।
সমস্যা হইলো
কিছু সংখ্যক আজাইরা লোক
গোণাগুণতিতে এরা অতি নগণ্য বলা যায়
এরা
ভাল থাকবার ব্যাপারে খুবই উদাসীন
এদের
গাড়ি বাড়ি নাই
মাইয়ালোক নাই
পুরুষ নাই।
অবশ্য ভালোবাসবার ব্যাপারে এরা মারাত্মক ক্রেজি
আর অর্গ্যানিক
আর ডায়াসপোরিক—
প্রচন্ড ঘৃণাবোধ, হেমাঙ্গ, ব্লু ভ্যাম্পায়ার
এদের ভেতর।
সুখী মানুষের ভেতর সচরাচার যেগুলা থাকে না আর কি।
নাজিম হিকমতের বাসায় পুলিশি তল্লাশ
সম্পূর্ণ সাদা কাগজে কয়েকটা মাত্র শব্দ
অভব্য
এলোমেলো।
এরা তো ভারি বিরক্তকর
আর বিপজ্জনক!
যথেষ্ট নৈতিক অভিমান
হোক স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকা
বাচ্চাটা শুতে চায় ঠিক দু’জনের মাঝখানেই
আসলে স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকা কী ও তো জানে না
ও শেখেনি বাংলা বর্ণমালা
কোনটা কী রং ও জানে না
ওর কেবল দরকার বাবাকে আর মাকে
কিন্তু শীতের রাতে সবারই তো সবাইকে দরকার পড়ে
আর এটা সবার বোঝা দরকার
হ্যা ঐ শয়তান বাচ্চাটারও
কবি পরিচিতি: জন্ম ২৭ অক্টোবর, ১৯৭৮; জন্মস্থান, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা : এলাংগী, কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ-৭৩৩০, বাংলাদেশ। তিনি বাংলা কবিতায় Tea Poetry Movement এর উশকানিদাতা। কাব্যগ্রন্থসমূহ : ছাই (২০০৫), দেয়ালে লেখা কবিতা (২০০৮), রাস্তার জোনাকি (২০১৩), ইবলিস (২০১৭), চুপ (২০১৭), মারাঠা মুনমুন আগরবাতি (২০১৮), মাতাহারি (২০২০), টি পোয়েট্রি (২০২০), সরকারি কবিতা (২০২১), হংকঙের মেয়েরা (২০২২), আগুন (২০২৪), বিষ (২০২৪), চা কফি আর জেনারেল কানেকটিভিটি (২০২৪); প্রবন্ধ : কবির কুয়াশা (২০২৫)।