বর্ষার দশটি কবিতা :: আরিফুল হাসান

 বর্ষার দশটি কবিতা :: আরিফুল হাসান

 

বর্ষার দশটি কবিতা :: আরিফুল হাসান

১.আষাঢ়ে পূর্ণিমায়

তোমার দেখা পেলাম, কতোদিন পর!

কতো বৃষ্টি শুকিয়ে গেলো

কতো পথ মুছে দিলো জলের রেখা।

যখন সামনে থেকে দেখলাম

তোমার অবয়ব টের পাইনি

যখন পিছন থেকে দেখলাম

তুমি অদৃশ্য হয়ে গেছো।

তাহলে কেমন দেখা দেখলাম আমি?

ঈশান-নৈঋতে জমে আছে মেঘ

চাঁদের পৃষ্ঠায় শুধু তুমি।

 

২.আমি ভালো আছি 

এই ভিজে বর্ষায় 

জড়োসড়ো কথার মতো

হুঁকোর আগুনে পুড়ি মুখ।

গতি ও বিবিধ মেঘ যাপন

মনোময় কদম ফুলের ত্রাসে

বলিষ্ঠ সন্ধ্যাটা মুক হয়ে যায়।

ভিজে বর্ষায়

আমি তোমার আচল তলে পেতেছি আসন।

 

৩.জল থইথই বুকে

কেমন করে লেখো আমার নাম

মূহুর্তে তা ধুয়ে মুছে যায় 

কোন কালিতে করো রে বদনাম

আমায় লিখো কাজল-কালিমায়।

কেমন করে বৃষ্টি ফোটায় ফুল

পরাগরেণু ধরো তোমার বুকে

জোয়ার জাগে, ভাঙে নদীর কূল 

বর্ষা জ্বরে মরছি ধুঁকে ধুঁকে। 

 

৪.চারটে নদীর মোহনায় 

এক দরদিয়া সুর, মাঝির উদাস মন

পালে লেগেছে হাওয়া। ভনভন ভনভন 

ছুটছে উজানের জল, চাষির খামার

ভেসে গেছে সম্পর্ক তোমার আমার।

পাক খায় ঘোলা ঢেউ, বাঁকে জলস্বর

মোহনায় আটকে থাকে আঁচল

তামাদি বিলের ভাস্বর মারে শর

ডুবে যায়, জ্বলন্ত মানুষ, নামে বাদল।

ধারাক্রম বিভ্রম হেতু, ন-মানুষ 

চারটে নদীর মোহনায় হারায়েছে হুঁশ।

 

৫. নাইয়রী

ঘাটে বাঁধা ডিঙি নৌকোর পাটাতনে 

কার চোখের জল লেগে আছে

গলুইয়ের মাথায় কে দিয়েছে জল?

কার চোখ দুটো ছলছল, বর্ষামাস

নাইয়রী, ও নাইয়রী, তুমি নার্সিসাস। 

ভাটিয়ালি কাঁদে বৈঠা জলবায়ু 

নিমিষেই চোখ দুটোতে স্মৃতিবিরহী 

মেখে নেয় কেয়ার খোয়াব, বৃষ্টিতে

বাপ-ভাইয়ের দেশে দেখে রোদ সৃষ্টিতে।

 

৬.কদম কি আশ্চর্য ফুল

সবুজ বলের উপর হলুদ কার্পেট 

তার উপরে শাদা তীর

বিদ্ধ করেছে হৃদয়

কি অবলীলায় 

সৌন্দর্যে করেছে আকৃষ্ট 

মোহাবিষ্ট আর উথালপাথল ঢেউ।

কদম কি আশ্চর্য ফুল

ফুসফুসের ভেতর চুপ লকডাউন

শুনশান নীরবতা, সর্বনাশা ক্লাউন।

 

৭. বর্ষা ও মরুচর

কে বলে বর্ষা আসে আষাঢ়ে শ্রাবণে

যার চোখ শুকিয়েছে বহুজন্ম আগে

তার ভাগে, পড়ে কি বৃষ্টির ফোটা ধন্যে

না হতভাগা, তোর বুকে মরুভূমি জাগে।

জলের ঝিমিক শুনতে কার লাগে ভালো 

কে থাকে সজাগ সারা রাত্রি বৃষ্টিজলে

কার মেঘ ধুয়ে গেছে আঁখির কাঁজলে

দিনরাত অন্ধকার, নেই কোনো আলো?

সেই মরুচর পাপী বরষা বঞ্চিত 

প্রেমের আঘাতে যারা ক্ষতবিক্ষত। 

 

৮. কেয়ার বনে

জল ভাসালো ঘর, ওলো জলকন্যা 

কে রাখে খবর?

আমার সিথান ভিজে গেছে মেঘে

জাগে কে লো আমারই নাম ধরে

কোন বাতায়ন রং লেগেছে বাগে

ওলো সখি হৃদয় কেমন করে

কে রাখে খবর?

ওলো সখি ভাসিয়ে দিবি আমায়

কেয়ার বনে রাত কাটে না ধাঁধায়। 

 

৯. তোমার চুলের মতো মেঘ

যে বিকেলটা ছড়িয়ে আছে

তোমার ভেজাচুলে, বারান্দায় 

একটি দোয়েল পাখির শিশ

একগুচ্ছ উড়ো মেঘ।

যে বিকেলটা দাঁড়িয়ে আছে

প্রিয় অর্কিডে বর্ষারং শাড়িতে

হাতের মুঠোয় কারো হৃদপিণ্ড 

বারবার বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। 

 

১০. এসো হে আগুন বৃষ্টি 

এই জলজ শহর

তোমার ক্ষুধার্ত চারটি হাত

প্রতিদিন ভিক্ষাবৃত্তি করে

সংসদ ভবনের অন্দরমহলে!

কি লজ্জা! কি লজ্জা! 

এই বৃষ্টি বন্দনায়

আমি কোনো ফুটপাত রাখিনি

আধুনিক শহরের মানচিত্রে। 

এসো আগুনের বৃষ্টি 

একটি বায়ান্নোর মতো মিছিল

রাজপথ ডুবিয়ে দাও রক্তে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post