চানক্য
সেন এবং পিতা পুত্রকে
মোঃ মজিবর রহমান
বিখ্যাত লেখক
চানক্য সেনের প্রকৃত নাম ভবানী সেনগুপ্ত। তিনি ১৯২১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর
জন্মগ্রহন করেন। একাধারে তিনি একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, লেখক ও
কথাসাহিত্যিক। তিনি চানক্য সেন ছদ্মনামে বেশকিছু জনপ্রিয় উপন্যাস ও তথ্যসমৃদ্ধ গ্রন্থ
রচনা করেন।
তিনি ভারতের
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আই কে গুজরালের সহকারি হিসেবে কিছুদিন কাজ করেছেন।
আন্তর্জাতিক বিষয়ক—বিশেষ করে আফগানিস্তান, সোভিয়েট ইউনিয়ন, দক্ষিণ পূর্ব
এশিয়া ও ইন্দো-আমেরিকা সম্পর্কে তার অগাধ ধারণা ছিল। চানক্য সেন রচিত
সর্বাধিক জনপ্রিয় দুটো বইয়ের মধ্যে একটি ‘পিতা
পুত্রকে’ অন্যটি ‘পুত্র পিতাকে’।
গত ১২/০৫/২০২৫ খ্রি:
তারিখ ঢাকার নিউমার্কেটের আলিগড় লাইব্রেরি হতে তার লেখা ‘পিতা পুত্রকে’ বইটি
কিনলাম। বিশ ও ত্রিশের দশকের পিতৃপ্রজন্মের একজন হিসেবে তিনি তার ছেলের কাছে তার
জন্ম, বেড়ে উঠা, শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন, সমসাময়িক রাজনৈতিক ও আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে তুলে ধরেছেন ‘পিতা পুত্রকে’ গ্রন্থে।
পাশাপাশি বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, স্বদেশী আন্দোলন হতে ভারতবিভাগ পর্যন্ত ও
তাঁর জীবনের বিভিন্ন দিক তিনি বইটিতে তুলে ধরেছেন। তার গ্রামের বাড়ি সম্পর্কে
আমার কোন ধারণা ছিল না। তার গ্রামের বাড়ি সমন্ধে তিনি লিখেছেন ‘পূর্ববঙ্গের
এক তালুকদার পরিবারে তার জন্ম।’ তার পিতা খুলনা হতে স্টিমারে চেপে পালং, তারপর আট-দশ
মাইল হেঁটে তার গ্রাম। তারা শুরেশ্বর হতে স্টিমারে উঠে গোয়ালন্দ হয়ে ট্রনে কলকাতা
পৌঁছতেন। গ্রামের নাম মাদারীপুর মহাকুমার ‘গনেশপুর’ বলে উল্লেখ করেছেন। এ গ্রামটি
কার্তিকপুর হবে বলে মনে হয়। কারণ গনেশপুর নামে বর্তমানে এখানে কোনো গ্রাম নেই। কার্তিকপুর
গ্রামটি বর্তমান শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলায় অবস্থিত। তার বইয়ে মাদারীপুর
মহাকুমার নাম ছাড়াও ভেদরগঞ্জ, শুরেশ্বর, পালং, ভোজেশ্বর, ডিঙ্গামানিক ও
মধুপুর গ্রামের নাম এসেছে। এ অঞ্চলের বিশ ও ত্রিশ দশকের রাজনীতি ও সামাজিক ব্যবস্থা
সম্পর্কে তার এ বইটি পড়ে জানা যায়।
তিনি কার্তিকপুরের
মুসলিম জমিদার গিয়াসউদ্দিন চৌধুরীদের প্রতিষ্ঠিত কার্তিকপুর হাইস্কুল (১৮৯৯)
হতে ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেছিলেন এটিকেও গনেশপুর হাই স্কুল বলে উল্লেখ
করেছেন। এটি মুদ্রণপ্রমাদও হতে পারে। এ বিদ্যালয় হতে তিনি ইংরেজি, বাংলা ও
সংস্কৃততে লেটারসহ ম্যাট্রিক পাশ করেন। এছাড়াও কলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজ হতে
বোর্ডে ৩য় স্থান অধিকার করেন। পরবর্তীতে স্কটিশ চার্চ কলেজ ও কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। পড়াশুনা শেষ করে তিনি ষ্টেটসম্যান পত্রিকায়
সাংবাদিকতা শুরু করেন।