অবসর
সুলতান মাহমুদ
আমি আজও অনেক ব্যস্ত। নিয়মমত সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করেছি। বারান্দার লনে বেশ কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করেছি। কোরআন পড়েছি। কুসুম গরম পানিতে গোসল করেছি। এটা আমার পুরনো অভ্যাস। নিয়মমত টেবিলে খাবার দেয়া আছে। আমি দ্রুত খাবার গিলছি আর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি। এই... রে সাড়ে আটটা বাজে। আজ নিশ্চিত দেরি হয়ে যাবে। শেষে আবার লেট লতিফের খাতায় নাম উঠে যায়! দ্রুত খাবার শেষ করি। সাহেরা আমার টাইটা একটু দ্রুত বেঁধে দাওতো। সাহেরা প্রায় ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে। এমনতো কখনো হয় না। সে কাঁদছে। কান্নার বেগে আমার শার্ট ভিজে যাচ্ছে। সাহেরা তুমি কাঁদছ কেন? কি হয়েছে? আমাকে বল। কিন্তু সাহেরার কান্না থামে না।
-তুমি কো..থা..য় যাচ্ছ?
-কেন অফিসে।
-আজ থেকেতো তোমার অফিস নেই।
গতকালইতো ফেয়ারওয়েল নিলে।
আমি ধপ করে সোফায় বসে পড়ি।
আমার মনেই ছিলো না যে গতকালই চাকরি হতে অবসরে গিয়েছি! তাহলে এখন আমি কোথায়
যাব? অসহায়ের মতো প্রশ্ন করি। সত্যি আমার খুব অসহায় লাগছে। কোথায় যাব?
কোথায়??
আমার আর অফিসে যাওয়া হয় না।
বারান্দায় একটি চেয়ার বসে আনমনে চলে যাচ্ছি অতীত স্মৃতির পানে। অবারিত মাঠ।
মাঠ ভরা ধান। ধান ক্ষেতের আল বেয়ে বাবা নিয়ে যাচ্ছেন পাঠশালায়। বাবার হাত ধরে
জীবনের প্রথম পাঠশালায় যাওয়া। সে এক অসাধারণ অনুভূতি।
-মাস্টার সাব হাড্ডি আমার, চামড়া
আপনের! যদি লেহাপড়া না করে, পিডাইয়া হাড্ডী চামড়া আলাদা কইরা হালাইবেন!
মাস্টার মশাই আমার দিকে গম্ভীর
দৃষ্টিতে তাকায়। সে চোখের দৃষ্টি আমার মনে ভয়ের চিহ্ন এঁকে দেয়। সেই একবারই বাবার
ছেলেকে নিয়ে পাঠশালায় যাওয়া। এ যেন পথের শুরুটা চিনিয়ে দেওয়া, এবার বাকি পথ
একা হাঁটার পালা। গ্রামের পাঠশালা। মেঠোপথ। অবারিত মাঠ। বৈশাখে কার গাছে
কাঁচা আম আছে সে খোঁজ রাখা। কখনো পাঠশালা ছুটি হলে দৌড়ে এসে গাছের নিচে দাঁড়ানো।
ঝড়ো হাওয়ায় কচি আম পড়ে থাকত গাছের ধারে। বন্ধুরা মজা করে গাছের আম খেতাম। কখনো
কৃষকের কাছ থেকে চেয়ে নিতাম পাকা টমেটো। কি চমৎকার তার রঙ। লাল টকটকে! কাঁচা
মরিচ, পেয়াজ, লবন দিয়ে হতো টমেটো ভর্তা। মাঝে মাঝে পাঠশালা ছুটি হলে বৃষ্টি নামত।
আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টি। বৃষ্টির মধ্যে সেকি হৈ-হুল্লোড়, কাদা
পানিতে মাখামাখি, দাপাদাপি। সত্যি! সে এক শৈশব ছিল। দূরন্তময় শৈশব।
বর্ষাকালে রাস্তা-ঘাট কাদায় মাখামাখি থাকত। হাঁটু কাদা ভেঙে পাঠশালায় যেতে হত।
কখনো কাদায় পিছলে আঁছাড় খেয়ে পাশের খালের পানিতে পরিস্কার করে আধ ভেঁজা হয়ে যেতাম।
এমনি করে শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা পেরিয়ে শেষ হয় আমার প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্ব। শিক্ষকদের
শাসনে পড়াশোন ভালোই চলছিল। ক্লাস ফাইভে বৃত্তিও পেয়েছিলাম। এরপর বাবা ভর্তি করিয়ে
দিলেন জেলা পর্যায়ের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সাথে একটা লজিং ঠিক করে দিলেন।
হয়ে গেলাম লজিং মাস্টার। ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়াই, তিনবেলা খাই আর স্কুলে
যাই। জেলা শহর থেকে বাড়ি অনেক দূরে। চাইলেই যাওয়া যায় না। আর তখনতো যোগাযোগ
ব্যবস্থাও এত ভালো ছিলো না। মায়ের কাছে যেতে মন কেমন করত। কিন্তু বাবার বারণ ছিল
ঘন ঘন বাড়ি যাওয়ার। বাবাকে ভয় পেতাম। একটা শ্রদ্ধা মিশ্রিত ভয়। তাই বাবার কথার
অবাধ্য হতাম না। পরীক্ষা শেষ হলে বাড়ি যেতাম। তখন খুব ভালো লাগত। মা নানা রকম
খাবার রান্না করত। পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা হেতো। ছুটি শেষ হলে আবার লজিং বাড়ি
ফিরে যেতাম। লজিং বাড়ির একটা ঘটনা মনে পড়ে- একদিন সন্ধ্যায় স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলাম।
মাগরীবের আজান হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। একটা বিশাল চক পার হয়ে বাড়ি যেতে হতো। চকটা
ছিল মূল রাস্তা থেকে কিছুটা নিচু। চকের মাঝে একটা মেঠো পথ। পথের শুরুতে লতা-গুল্মে
পরিপূর্ণ একটা ঝোঁপ। ঝোঁপটা পথের ধারে একদম এলিয়ে আছে। তখন খুব গরম পড়েছিল।
সন্ধ্যার দিকে হালকা বাতাসে আমার বেশ ভালো লাগছিল। আমি ঝোঁপের পাশ দিয়ে পা
বাড়ালাম। ঝোঁপ ঘেঁষে একটা কুণ্ডুলি পাকানো কিছু চোখে পড়ল। অন্ধকারে ঠিক বুঝা যায় না।
আমি ভাবলাম চোখের ভুল। যেই-না পা বাড়িয়েছি ওমনি ফোঁস করে আওয়াজ করে কারো একটা কিছু
ঝোঁপের আড়ালে চলে গেল! আমি সা-প সা-প বলে চিৎকার করে ওপরে উঠে গেলাম। বিষয়টি ভাবলে
এখনো আমার গায়ে কাটা দেয়। একসময় কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক পাশ করলাম। এরপর জেলা
শহরেই কলেজে ভর্তি হলাম। যথারীতি কলেজেও ভালো ফলাফল করলাম। এবার বাবা আমাকে ঢাকায়
পাঠালেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হলাম। হলেও সীটও পেলাম। এ
এক অন্যরকম যাত্রা। আমি যেন এক মুক্ত পরিবেশ পেলাম। মনে হয় বড় হওয়ার স্বাদও
পেলাম। এখন আর বাবা আগের মত রাগ করবে না। বড় হয়েছি না! কিন্তু আমার সব ধারণা ভুল
প্রমান করে বাবার চিঠি পেলাম। জরুরি তলব। বাড়ি যেতে হবে। মুহূর্তে আমার বুকের
ধুকপুকানি বের হওয়া শুরু হলো। ব্যাগ গুছিয়ে রওনা হলাম বাড়ির পথে। বাড়ি গিয়ে দেখি
বাবা সহ আরও মুরব্বিরা বসে আছে। ঘাটে একটা নৌকা বাঁধা। মা ঘরে ডেকে নিয়ে
গেলেন। নে এই নতুন জামা কাপড়গুলো পড়। আজ তোর বিয়ে। মেয়ে তোর বাবার পছন্দ। আমার
বিয়ে! যেন আকাশ থেকে পড়লাম। বাবা ধমক দেয় পিছন থেকে।
-এত আইতকা উডনের কি আছে? মাইয়া
নামাজি, ধর্মকর্ম করে, পড়ালেহাও কিছু আছে। আর পোলাপান বড় অইলে বাপ মার দায়িত্ব
বিয়া করান। নে তৈরি হ।
আর কথা নয়। বরের বেশে চলে
গেলাম সবার সাথে। বিয়ের আগে মেয়েকে দেখাও হয়নি। বিয়ের পরে একটা আয়না ধরে তার মুখ
আমাকে দেখানো হয়। আমি অবাক হলাম। একটা আস্ত চাঁদ যেন আয়নায় ঢুকে পড়েছে! বিয়ের পরে
আমার প্রায়ই বাড়ি যেতে ইচ্ছে হতো। বউ বাড়িতে আর আমি ঢাকা। মন কেমন কেমন করত। ওদিকে
বাবার নিষেধ ছিলো ঘনঘন বাড়ি যাওয়া। পড়ালেখার ক্ষতি হোক তা তিনি চান না। একদিনের
ঘটনা—আকাশে
হালকা মেঘ ছিলো। বউকে খুব দেখার ইচ্ছে জাগল। ভাবলাম হঠাৎ বাড়ি গিয়ে তাকে একটু
চমকে দেই। সদরঘাট থেকে লঞ্চে ওঠার পর শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি রূপ নিল প্রচন্ড
ঝড়ে। দুপুর পেড়িয়ে সন্ধ্যায় যখন ঘাটে নামলাম তখন বাড়ি যাওয়ার জন্য কোন যানবাহন
নেই। বাড়ি প্রায় পনের কিলো দূরে। মাঝে একটা ছোট নদীও পার হতে হবে। কি করব হেঁটেই
রওনা হলাম। ঘুটঘুটে অন্ধকারে টর্চ জ্বেলে পথ চল্লাম। নদির পাড়ে নৌকাও নেই।
পরিচিত ছমির মাঝির বাড়ি গিয়ে অনেক কষ্টে তাকে রাজি করলাম। নদি যখন পার হই তখন রাত
১টা। টর্চের চার্জও শেষ। অন্ধকারে হেঁটে কোনরকম বাড়ি পৌঁছলাম। বাড়ির উঠোন দিয়ে
একটা কুকুর অলসভাবে হেঁটে যাচ্ছিল। কুকুরের সাথে পা লেগে ধড়াম করে আছাড় খেলাম।
ভিতর থেকে মায়ের গলা ভেসে এলো।
-কে?
-মা আমি। মা হ্যারিকেন
জ্বালিয়ে বাইরে এলেন।
-এই রাইতে? কেমনে আসলি।
-মা, ছুটি তাই চলে
এসেছি।
-আসলিতো ওদিকে বউমাতো আইজই
বাপের বাড়ি গেল! শুনে আমার মুখ শুকিয়ে আমসত্ত¡!
আমি যখন ইতিহাস বিভাগে ফাইনাল
ইয়ারের ছাত্র তখন দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান
নিরঙ্কুশ ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছেন। নিয়মমত তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা
কিন্তু পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করছে। এরি মাঝে ৭ই
মার্চে বঙ্গবন্ধু ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন। সারা দেশ
উত্তাল। পাকিস্থানী শাসকগোষ্ঠী আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ভিতরে ভিতরে
তাদের অন্য পরিকল্পনা চলছিল। অবশেষে এলো সেই ভয়াল রাত। ২৫শে মার্চ। আমি তখন
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে। দেশে কারফিউ জারী করা হয়েছে। থমথমে পরিবেশ। আমি থাকতাম
জগন্নাথ হলে। রাত বারোটার দিকে লক্ষ্য করলাম মর্টার ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে
পাকসেনারা হলে প্রবেশ করছে। আমি অবস্থার ভয়াবহতা উপলব্ধি করি। নিচতলায় ছিলাম।
জানালার ভাঙা গ্রীলের ফাঁক গলে পাশের ময়লা ড্রেনে আশ্রয় নেই। পাক সেনারা হলে
প্রবেশ করে নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই মেরেছে।
ছাত্রদের আত্মচিৎকারে ভারী হয়ে উঠে পরিবেশ। অনেক ছাত্রকে হল থেকে ধরে এনে মাঠের
সামনে ব্রাশ ফায়ার করা হয়। গেস্ট রুমে অনেক অতিথি ছিল তাদেরকেও হত্যা করা হয়। ভোর
রাতে চলে লাশ সরানোর অভিযান। ওরা কোন মৃতের চিহ্ন রাখতে চায়নি। গণকবর দেয়ার জন্য
সরিয়ে নেয়া হয় লাশ। পৃথিবীর ইতিহাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে ছাত্র ছাত্রীদের হত্যা এক
নজিরবিহীন ঘটনা। পরে আমি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ি। বাড়ির কারও খোঁজ রাখা সম্ভব হয়নি। নয়
মাস যুদ্ধ শেষে যখন বাড়ি ফিরি তখন আমার ভিটা শূন্য। মা বাবা দুজনেই যুদ্ধে
নিহত হয়েছে। সাহেরাকে তার বাসায় পেলাম। একবুক কষ্ট নিয়ে শুরু হলো নতুন জীবন।
স্বাধীনতার পরে পড়াশোনা শেষ
করে কিছু দিন নানা জায়গায় ছোটখাটো চাকরি করেছি। অনেক অভাব অনটনে জীবন অতিবাহিত
করেছি। কয়েক বছর পরে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে চাকুরীতে
যোগদান করি। শুরু হয় আমার জীবনের আরেক অধ্যায়।
প্রশাসনে চাকুরীর সুবাদে আমাকে
বিভিন্ন জেলায় চাকরি করতে হয়েছে। বিচিত্র পরিবেশ, বিচিত্র অভিজ্ঞতা। মানুষকে
অনেক কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। মানুষকে ভালোবাসতে হয়। ভালোবাসা দিলে ভালোবাসা
পাওয়া যায়। উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে হয়ত উপরে সবাই সম্মান করবে তবে সেটা
প্রকৃত চিত্র নয়। সেটা আসলে চেয়ারের প্রতি সম্মান, চেয়ারের মানুষটার প্রতি নয়। যখন
চেয়ার চলে যাবে তখন হয়ত ঐ মানুষটার কোন দামই থাকবে না। তাই মানুষের জন্য বৃত্তের
বাইরে গিয়ে কিছু করতে হয়, চাকরির ধরাবাঁধা নিয়মের বাইরে কিছু সৃজনশীলতা দেখাতে হয়
তবেই মানুষ মনে রাখে। আমি চেষ্টা করেছি। একজন কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে মনে করিনি,
যেখানেই গিয়েছি সাধারণ মানুষের মধ্যে একজন হওয়ার চেষ্টা করেছি। এ শিক্ষা আমি
মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে পেয়েছি। তাছাড়া, দেশটাতো আমার। এদেশের গরীব দুখী
মানুষ আর আমি ভিন্ন কিছু না। তাদের জন্য কাজ করতে পারাটা সৌভাগ্যের বিষয়। একবার
আমি এক জেলায় পোস্টিং পেলাম ডিসি হিসেবে। জয়েনিং করে আমি সাধারণ বেশে স্থানীয়
বাজারে গেলাম মাছ কিনতে। মাছ বাজারে গিয়ে লোকমুখে জানতে পারলাম শহরের পাশ দিয়ে বয়ে
যাওয়া নদীটিতে আগের মত মাছ পাওয়া যায় না। আমি জানতে চাইলাম কেন? একজন জানাল, এক
প্রভাবশালী ব্যক্তি নদী তীরে একটা কারখানা করেছে। তার ময়লা আর্বজনা সব নদীতে গিয়ে
পড়ে; ফলে পানি দূষিত হয়ে মাছ কমে যাচ্ছে। আমি সেদিনই কারখানা বন্ধ করার জন্য মালিক
বরাবর একটা নোটিশ করে দিলাম। পরেরদিন এক সুবেশী বয়স্ক ভদ্রলোক আমার অফিসে আসলেন।
নিজেকে একজন শিল্পপতি মর্মে পরিচয় দিলেন।
-আপনার জন্য কি করতে
পারি?
-আমার কারখানার উপর নিষেধাজ্ঞা
উঠিয়ে দিন।
-কিন্তু আপনার কারখানার
ফলেতো নদী দূষণ হচ্ছে।
-ঠিক আছে, কিন্তু
কারখানার ফলেতো বহু মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
-তা ঠিক, কিন্তু তাই বলেতো
আপনি একটা নদীকে মেরে ফেলতে পারেন না। আর আপনার গুটিকয়েক কর্মসংস্থানের বদলে এ
নদীর উপর নির্ভরশীল কত পরিবার তার জীবিকা হারাবে সে খোঁজ আপনি রাখেন। এছাড়া, হাজার
বছর ধরে এ এলাকায় নদীকেন্দ্রীক যে সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তা কি আপনি টাকার
অংকে মাপতে পারবেন? আর পরিবেশ বিপর্যয়ের ব্যাপারতো আছেই। আপনি যদি এসব ঠিক রেখে
কারখানা চালাতে পারেন তবে আমার আপত্তি নেই।
তিনি ভেবে দেখবেন বলে বিদায়
নিলেন। এরকম অনেক ঘটনা আছে। অবশ্য একবার একটা ঘটনায় বেশ ধাক্কা খেয়েছিলাম। আমার
জেলাটি ছিল সীমান্ত এলাকায়। ভারতের সাথে বর্ডারে একবার একটা ছোটখাটো ঝামেলা হলো।
তো আমি আলোচনার জন্য পাশ্ববর্তী ভারতের একটা জেলায় গেলাম। আমার সাথে ছিলেন আমার
জেলার পুলিশ সুপার। আলোচনা হবে ভারতের ঐ জেলার প্রশাসকের সাথে। যখন দেখা হলো তখন
তিনি আমার সাথে থাকা পুলিশ সুপার এর পরিচয় জানতে চাইলেন। আমি তার পরিচয় দিলাম।
তিনি শুনে বললেন, দেখেন আলোচনা করবে সিভিল। আলোচনার টেবিলে যদি আর্মস পারসন
থাকে তাহলে আলোচনা প্রভাবিত হয় কারণ সিভিলরা চিন্তা করে ব্রেন দিয়ে আর আর্মস
বাহিনী চিন্তা করে বন্দুক দিয়ে! ডিসির পরে আরও অনেক পদে চাকরি করেছি। এ ছোট্ট জীবন
অনেক ঘটনাবহুল। কিন্তু কখনো অবসর নিতে হবে সে কথা মাথায়ই আসেনি। শুনেছি উন্নত দেশে
নাকি অবসরের নির্দিষ্ট বয়স নেই। শরীর ও মন যতদিন সুস্থ থাকে কাজ করা যায়। তবে কেউ
অবসর নিতে চাইলে ছয়মাস পূর্বে তার জন্য একজন মনোচিকিৎসক ঠিক করে দেওয়া হয়। সে
দীর্ঘ সময় নিয়ে অবসর প্রার্থীকে কাউন্সিলিং করে অবসরের জন্য প্রস্তুত করে কিন্তু
আমাদের দেশে এরকম অবসর অনেক সময়ই অবসর গ্রহণকারীকে হতবিহ্বল করে দেয়। তার চেনা
পরিবেশ থেকে একটা অজানা পরিবেশে গিয়ে সে পড়ে। সেখানে সে একা। আমি কি পারব এ জীবনকে
স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে? মনের গহিনে প্রশ্ন অনুরণিত হয় কিন্তু কোন উত্তর খুঁজে
পাই না।
অত্যন্ত চমৎকার একটি প্লাটফর্ম। বেশ ভালো ভূমিকা রাখছে লেখালেখির জগৎকে বাঁচিয়ে রাখতে...
ReplyDeleteধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য।
Delete