গাজায়
ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা
জাগো
বাহে জাগো
গেরিলা আজাদ
অসংখ্য নবী ও রাসুলকে ধারণ করেছে এই
মাটি—
পূন্যভূমি প্যালেস্টাইন।
এখানে শান্তির আলোকবর্তিকা জ্বলবে।
ফুটবে ‘পিওনি’ ফুল।
মসজিদুল আল-আকসা তার দ্যূতি ছড়াবে
চারদিক।
মোহাম্মদ দারবিশ তাঁর কবিতায় প্রেমের
সুবাস ছড়াবে।
এই মাটিতে কখনো বিষাক্ত ক্যাকটাস
কিংবা পার্থেনিয়ামের মতো
উদ্ভিদের অঙ্কুরোদগম হবে না।
এখানে ট্যাংকের চাপায় পিষ্ট হবে
মানবতা!
হায়নার ছোঁবলে ক্ষতবিক্ষত হবে শিশু,
পরিস্ফুটিত গোলাপ!
গন্ধ ছড়াবে বারুদের উত্তপ্ত সীসা,
বিষাক্ত ফসফরাস! কাম্য নয়।
এখানে কোন সাম্রাজ্যবাদী শকুনের
আনাগোনা কাম্য নয়।
এই পুণ্যভূমি দখলদার ইসরায়েলের নয়।
এই পুণ্যভুমি আমার। এই স্নিগ্ধ শ্যামল
গাজা উপত্যকা আমার।
এই চারণভূমি আমার। আল-আকসা আমার।
এখন সময় এসেছে জাগবার
জেগে উঠো বিশ্ব মানব
জেগে উঠো মানবতা।
‘জাগো বাহে কোনঠে সবাই।
========
তোমরা
কি আমাদেরই জাতি?
মো: নাসিম জিন্নাহ
যদি আর নাই পারো তবে ফিলিস্তিনের
বাচ্চাদের জন্য এক মুঠো ভাত রেখে দিও,
তাও যদি নাই পারো তবে এক মুঠো
ভাতের মূল্য পাঠিয়ে দাও ওদের জন্য।
চোঁখ মেলে দেখো নেটের সকল পর্দায়
ওরা খাচ্ছে ঘাসের মূল, ওরা খাচ্ছে
বনের লতা, ওরা খাচ্ছে ডাসবিনের পঁচা
খাদ্য।
চোখে জল আসে ওদের কান্না দেখে।
ওরা চিৎকার দিয়ে বলে হে বিশ্বের
মুসলমান
তোমরা কি আমাদেরই জাতি?
তবে কেন আজ চুপ করে আছ চোঁখ বুজে
রুখো ইসরায়েলকে বাঁচাও ফিলিস্তিনকে।
বাঁচাও ফিলিস্তিনের নর ও নারীকে
আর কত হত্যা? কত ধ্বংস?
ওদের কান্নায় ভারী হয়ে গেছে আসমান
পানির জন্য কাঁদছে শিশু কাতর পিপাসায়।
মায়ের জিহ্বা চুষে শিশু একটু তেষ্টা
নিভায়
গৃহ হারা সকল জাতি গুহায় তাদের শেষ
গতি
আর্তনাদে বাজে যুগল কানে
চল সবাই যাব ফিলিস্তিনে।।
========
ওরা
জেগে উঠেছিল
সুলতান
মাহমুদ
ওরা মাঝ রাতে জেগে উঠেছিল
গাজার ভগ্ন দালানের পাশে, খসে পড়া
পলেস্তারের নিচে
বিদ্যুৎবিহীন হাসপাতালের ডোমে
ধ্বংসপ্রাপ্ত পিচঢালা পথের বাঁকে!
ওদের মস্তকবিহীন মাথা, থেতলে যাওয়া
হাত
রক্ত নীলাভ চোখ, খণ্ডিত পদ যুগল,
ঝাঝড়া বক্ষ
বিদ্রুপের হাসি হেসে জেগে উঠে মাঝ
রাতে!
ওরা ইসরায়েলকে সালাম জানিয়েছে
য্যূরোপকে জানিয়েছে অভিনন্দন
সোভিয়েত ইউনিয়নকে শুভকামনা
আমেরিকার গলায় ফুলের মালা!
ওরা বলেছে—
আমাকে যারা ধর্ষণ করেছে আমি তাদের
শাস্তি চাই না
আমি শাস্তি চাই আমার ভাইয়ের—
যে আমাকে ধর্ষিত হতে দেখে
কা-পুরুষের মত চুপ থাকে!
ওরা মাঝরাতে জেগে উঠেছিল
এই ভাঙা দালানের ঝুলন্ত কার্ণিশে।
ওরা আরবলীগের পতাকাকে খাবলে খেতে
চেয়েছে
ওরা ওআইসির মানচিত্রে থুতু ছিটিয়েছে
ওরা সাতান্নটি মুসলিম দেশকে ফাঁসিতে
ঝুলাতে চেয়েছে
ওরা বিশ্ব প্রভুর দরবারে চূড়ান্ত বিচার
দাবি করেছে।
তারপর আরেকবার ওরা ধর্ষণকারীদের সালাম
জানিয়ে
সুবহে সাদেকের আগে ঘুমিয়ে গেছে!
========
যুদ্ধ চাই না শান্তি চাই
নজরুল
ইসলাম শান্তু
ফুলপাখিরা এক হয়েছে কষ্টভরা মনে
এক হয়েছে প্রতিবাদে স্বজন ও
সুজনে।
এক হয়েছে দিগন্ত মাঠ, নদ-নদী খাল-বিল
এক হয়েছে বক সারস ও উড়ন্ত
গাঙচিল।
ওদের সাথে এক হয়েছে শিশুর কন্ঠে সুর
এই পৃথিবীর আবর্জনা করতে হবে
দূর।
গাছপালা ও আকাশ বাতাস দুধসাদা কাশফুল
এক হয়েছে প্রজাপতি মৌমাছি
বুলবুল।
নারী-পুরুষ শিশু-কিশোর সবাই বেঁচে থাক
ভাল্লাগে না আর তো এখন অসভ্য
হাঁকডাক।
সবাই মিলে এই পৃথিবী গড়বে জানি ঠিক
খোদার কাছে তাই মোনাজাত চলছে
চতুর্দিক।
যুদ্ধ চাই না, রক্ত চাই না, দেখতে চাই
না লাশ
শুনতে চাই না পুত্রহারা মায়ের
দীর্ঘশ্বাস!
নিন্দা জানাই বিশ্বজুড়ে সকল মাখলুকাত
আমার মতো চায় না কেহ-ই যুদ্ধ
রক্তপাত।
শান্তিপ্রিয় পশু-পাখি প্রকৃতি গাছপালা
জোয়ার ভাটার কলতানে থাকুক
নদী-নালা।
যুদ্ধ চাই না, রক্ত চাই না, চাই
পৃথিবীর হাসি
এই দাবীতে এক হয়েছে আজকে বিশ্ববাসী।
========
ফিলিস্তিন
মোঃ
আবদুল করিম বেপারী
ঈদ আনন্দে ভাসছে বিশ্বের সকল মুসলমান
কেবল ভালো নেই, কাঁদছে আরবের ফিলিস্তিন!
কাপড় নেই, খাবার নেই, জীবন ছায়াবিহীন
দুঃখে-কষ্টে গৃহহারা—সহায়সম্বল সন্তানহীন।
কান্না ওদের কেন থামে না বলতে পার তুমি
যবে প্যালেষ্টাইন ইসরায়েলকে ভিক্ষা দিলো ভূমি।
রমে রমে যমের পাহাড় সে দিন হয় কেনা
আজ ফিলিস্তিন তিন কুড়িতে শোধে সেই দেনা।
কর্মকারের কর্ম ফল করে কর্মে কর্মে সমাপন
জীবন দিয়ে জীবন বাঁচাও, জিয়ন্তের জবান।
কেবল পাপি নৃত্যে হানায় প্রতিদিনের নির্যাতন,
ফিলিস্তিন কি বিশ্বরাজ্যে পাবে না ন্যায্য সম্মান?
অল্প কাজে অল্প লবে হবে না পুরান দেনা শোধ
পাষাণ ভেদে পাহাড় টেনে করতে হবে প্রতিরোধ।
বিশ্ব মোড়ল শীর্ষ সকল দেখ সুতায় সুতায় বাধা,
মানুষ যতই ভাবুক শীর্ষ সেনেরা লাগাবে ধাঁধা।
আপোষ তাপস যতই ভাবছো একটা সোজা পথ
সোজা সাপটা সহজ বার্তা রুখতে নাও শপথ।
আরব জাহান ধর্ম দোহন ওহে বিশ্ব মোমিনগন
অর্থ, অন্ন, অস্ত্র, বস্ত্র, কীর্তি মানুষের
মানবতার দান।
নিন্দা, ঘৃণা আভিধানিক শব্দ মালা নয় সমাধান
ভাব ভেদে দৃঢ় চিত্তে দেয়াল টুটে হও আগুয়ান।
মরিতে মরিতে মারিয়া দাঁড়াও সত্যের নওজোয়ান
দ্বেষ বিদ্বেষ হিংসের শেষ ফেলে হও দণ্ডায়মান।
কালে কালে জগৎজুড়ে ওরা বাঁধাবে যত জঞ্জাল
দেশে দেশে ফিরিবে কাঁধে নিয়ে মানবতার কঙ্কাল।
তোমাদের গতি তীর্য তুরের নিকোস সত্য জেহাদী
আসমানী বাদ, হৃদয়ে আঘাত নিরেট সত্য সেনানী।
কার পানে তাকিয়ে তোমরা, আল্লাহর পানা চাও
আল কোরআনের পথ ধরে যেথায় খুশি যাও।
মানব সবাই সবার মিত্র, ধর্মদ্রোহীর সাথে নয় সন্ধি
অগ্রসর হও, জয় কর, জীবন দাও থেকো না বন্দী।
চাওয়া নয়, দু’টি রুটি, হালুয়া, নয় গোস্তের বাটি
গৃহ নাস, কাঁধে লাশ সব সর্বনাসের চুরান কাটি
সেই কবে চলছে দুস্তর দূর্গম মরু পথে হাঁটি
আরব প্রান্তে চাই স্বাধীন সার্বভৌম একখণ্ড মাটি।
[রচনা : ০৯/০৪/২০২৪ খ্রি:]
========
রক্তাক্ত
গাজা
জান্নাতুল
ফেরদৌস মুক্তা
খুশির ঈদে হাত রাঙাই, মেহেদির নকশা
আঁকি
গাজার মেয়ে রাঙায় হাত, রক্তে ভেজা
মাটির আঁচি।
আমরা হাসি, ওরা কাঁদে, হারায় কত প্রাণ
বোমা ফাটে, শিশু মরে, ধ্বংসস্তূপের
গান।
রমজানে চাঁদ ওঠে, ঘরে ঘরে দীপ জ্বলে
গাজার আকাশ আগুনমাখা, শহর পড়ে ঢলে।
মসজিদেতে নামাজ শেষে দোয়ায় তুলি হাত
ঐ-পারে কেউ কবর খোঁড়ে—লাশের খোঁজে রাত।
মায়ের কোলে শিশুর লাশ, বাবার বুকে
ক্ষত
ঈদের দিনে ওদের বাড়ি শ্মশান হয়ে গত।
শাসকের চোখ অন্ধ হয়ে শোষণেরই গান
মানবতার কণ্ঠরোধে নিস্তব্ধ এ
বিশ্বজান!
ওঠো জাগো মুসলমান, গর্জে উঠুক প্রাণ
ফিলিস্তিনের কান্না শুনে তোলো
প্রতিবাদী গান।
ইসরায়েলের জুলুম থামুক, মুক্ত হোক আকসা
ফিলিস্তিনের মাটি জাগুক, ফিরুক
ভালোবাসা!
আর নয় নিঃশ্বাস রুদ্ধ, আর নয় চুপ
থাকা,
প্রতিবাদে জ্বলুক আগুন, বিশ্ব দেখুক
জাগা!
ফিলিস্তিন বেঁচে থাকুক
আল-আকসা মুক্ত হোক!
========
গাজা যুদ্ধ সংক্রান্ত তিনটি ছড়া
ইব্রাহিম
খলিল
০১ঘৃণা তোদের জন্য
গাজা যদি শরীর হয় তো, আকসা তবে জান
আকসা কেবল মাসজিদই নয়, মুসলমানের প্রাণ।
প্রাণ ছাড়া কি শরীর বাঁচে, শরীরটা হয় লাশ
পুণ্যভূমি জেরুজালেম, সাচ্চা ঈমান চাষ।
আকাশ সমান ধৈর্য তাদের, পাহাড় সমান বল
আকসা তারা আগলে রাখে, রক্তে নামুক ঢল।
লড়ছে যারা হামাস সেনা, শহীদ হয়ে ধন্য,
তাদের প্রতি লক্ষ সালাম, দোয়া তাদের জন্য।
মারছি থুতু অত্যচারি, সেই ইহুদির মুখে
যেই ইহুদি গুলি চালায় হামাস শিশুর বুকে।
তোরা পশু হিংস্র দানব, স্বভাব তোদের বন্য
পণ্যে তোদের লাথি মারি, ঘৃণা তোদের জন্য।
০২ বাঁচাও
ফিলিস্তিন
জ্বলছে গাজা পুড়ছে গাজা, ঝরছে তাজা রক্ত
লড়ছে হামাস শক্তি দিয়ে, ঈমান তাদের শক্ত।
মরছে নারী মরছে পুরুষ, কষ্টে গাজাবাসী
বিদীর্ণ বুক রক্ত ঝরে, তবু মুখে হাসি।
শক্ত ঈমান সাচ্চা দিলে, বুক পেতে নেয় গুলি
চুপ থেকো না এই জুলুমে, এসো আওয়াজ তুলি।
হও যদি ভাই সত্যিকারের, মুসলমানের ঘরে
ইসরায়েলের অত্যচারে, চুপ থেকো না ডরে।
আওয়জ তোলো শক্তি যোগাও, হামাস যোদ্ধার বুকে
চেয়ে দেখো হামাস শিশু , মরছে ধুকে ধুকে।
তারপরেও হাসি মুখে, নিচ্ছে মরণ মেনে
সাধ্য কি ভাই ঐ ইহুদির, ঈমান তাদের কেনে?
অস্ত্র হাতে হামাস লড়ে, রক্ষা করে গাজা
নারী-শিশু প্রতিদিনই, ঢালছে যে খুন তাজা।
লড়ছে তারা গাজায় থেকে, আমরা কেন চুপ
ইসরায়েলি পণ্য ছাড়ো, ঘৃণা করো খুব।
ইসরায়েলি পণ্যগুলো আর কিনো না সুখে
লাথি মারো ইসরায়েলের, অর্থনীতির বুকে।
হে দয়াময় তোমার কাছে, প্রার্থনা রাতদিন
রক্ষা করো আল-আকসা, বাঁচাও ফিলিস্তিন।
০৩ আর থেকো না
চুপ
বুকের ভেতর রক্তকণা
টগবগিয়ে ফোটে,
মনটা আমার পাখির মতো
আল-আকসাতে ছোটে।
যেথায় আমার মুসলমানের
রক্ত ঝরে রোজ,
ছোট্ট শিশুর কান্না দেখেও
নেয় না তো কেউ খোঁজ।
যেথায় বুলেট বিদ্ধ করে
বৃদ্ধ বাবার বুক,
ইসরায়েলি পশুগুলো
রক্তে খোঁজে সুখ।
জেগে ওঠো বিশ্ববাসী
ফিলিস্তিনের পক্ষে,
ইহুদিদের রুখে দিতে
সাহস রাখো বক্ষে।
ইসরায়েলি আগ্রাসনের
ঘৃণা জানাই খুব,
সত্যিকারের মুসলিমেরা
আর থেকো না চুপ।
[২০/০৩/২০২৫]
========
ফিলিস্তিনের পুণ্যভূমি
মোঃ ফিরোজ ভুইয়া
ওরে ও ইহুদির দল।
ফিলিস্তিনির পুণ্যভূমি
ছাড়বি কি-না বল।
মুসলমানদের পুণ্যভূমি
ফিলিস্তিনির মাটি।
কোন সাহসে সেই মাটিতে
বানাতে চাও ঘাঁটি।
বাস্তুহারা জাতি তোরা,
নেইতো নিজের দেশ।
মুসলমানদের দয়ায় তোরা
বেঁচেছিলে বেশ।
পরের দেশে থেকে খেয়ে
বাড়িয়েছো ভুঁড়ি।
এখন তাদের সাথেই করছো
নিঠুর এজিদগীরি।
শিশু নারী করছো হত্যা
বুলেটের আঘাতে।
এয়াজিদের বংশ তোদের
প্রাণটা নাহি কাঁদে।
জেগে উঠো বিশ্ব বিবেক
জাগো মুসলমান।
ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে
হাঁকাও মেশিনগান।
ফিলিস্তিনের পুণ্যভূমি
করতে হলে মুক্ত।
মুসলমানদের এক হয়ে
করতে হবে যুদ্ধ।
========
ঘুমাও বিবেক
মো.
আবু রায়হান সিদ্দীক (মুকুল)
বিবেক,
তুমি ঘুমিয়ে পড়ো
ক্লান্ত হয়েছো খুব
চিন্তা-ভাবনা কত করেছো
কত জনকে বুঝতে চেয়েছো।
কত যন্ত্রণার হিসেব কষেছো
ক্লান্ত হয়েছো খুব
এবার থাকো চুপ।
ভেবো না!
ভাই মরছে, বোন মরছে
কার মরছে মা?
কার গায়ের রক্ত ঝরছে?
স্বজন হারা কে হচ্ছে?
প্রাণটাই কার চলে যাচ্ছে?
সে সব অনেকের ভাবনা
তুমি ভেবো না।
কথা খাঁটি!
বৃষ্টিতো ঝরছে না
তাই রক্তে ভিজছে মাটি
ঘামতো ঝরেছে কতো!
সাগর-নদী বইলো কতোই
এবার যাচ্ছে না-হয় প্রাণই!
রক্তে ধুয়েই না-হয় মাটি
হবে কোমল পরিপাটি।
বিবেক,
তুমি জেগো না আর
ঘুমাও চিরতরে
যা হবার তা-ই তো হবে!
যার হারাবার সে হারাবে
ক্ষুধার জ্বালায় ধুকে মরবে
অমানুষে যাক পৃথিবী ভরে
ঘুমাও তুমি চিরতরে।
[রচনা : ২৩/০৩/২০২৫ খ্রি:]
========
ফিলিস্তানী
পবিত্র ভূমি
ইউসুফ
দুলাল
ফিলিস্তানী পবিত্র ভূমি
মানবতা বিরোধী হত্যা যজ্ঞ
আজ মুসলিম জাতি কেন অসহায়
একই জাতি কেউ নেয় না পক্ষ ৷
হাজার হাজার শিশুর মৃত্যু
বসত বাড়ি নিমিষে বিদ্ধস্ত
অসহায় চিৎকার রক্তের স্রোত
কে ধরিবে পক্ষে অস্ত্র ৷
কোনো ধর্মে নেই মানব হত্যা
ধর্মহীন মাতাল করবে না নত শীর
তারা পাগল ফেরাউন জাতি
যারা মানুষ হত্যা করে হয় বীর ৷
বিশ্ব-বিবেক কেন আজ চুপ
বিবেকের পথে নড়ে না মাথা
অস্ত্রবাজ জল্লাদ নিয়াহুর
বিচার করবে একদিন বিধাতা ৷
========
তিনটি কবিতা :: সুমাইয়া
ইসলাম
০১.
গাজাবাসীর আর্তনাদ
শান্তিপূর্ণ ফিলিস্তিনে দুঃখ এলো
নেমে
গাজাবাসীর জীবনচক্র হঠাৎ গেলো থেমে!
প্রতিবেশী দেশ ইসরায়েল হঠাৎ করে
হামলা!
বিশ্ববাসী দেখে অবাক কেউ করে না
মামলা।
ফেলছে বোমা আকাশ থেকে জ্বলছে আগুন দাউ
দাউ
গাজাবাসী আতঙ্কে সব কাঁদছে সবাই
হাউমাউ!
জ্বলছে আগুন, মরছে মানুষ দেখার
তো কেহ নাই
বিপদে পাশে না থাকলে তাহলে কিসের
ভাই?
গাজাবাসীর আর্তনাদে আকাশ বাতাস
ভারী
শুনতে আর পারছি না মোরা তাদের
আহাজারি!
অনাহারী গাজাবাসী রাখছে রোজা দিন রাত,
তাদের তরে করতে দোয়া তুলছি মোরা দুই
হাত।
গাজাবাসীর আত্মচিৎকার জ্বালায় বুকে
আগুন
আর কতো মানুষ লাশ হবে, আর কত ঝরবে
খুন?
আর কতো লোক মরলে তবে থামবে এদের
যুদ্ধ?
আর কতো খুন ঝড়লে পরে আত্মা হবে শুদ্ধ?
আল্লাহ! তুমি কবুল করো মুসলিমের
মোনাজাত
গাজাবাসীর তরে বাড়াও তোমার কুদরতি
হাত!
আল্লাহ! তুমি রহম করো, করো না
আশীর্বাদ
গাজা ইসরায়েলের মধ্যকার
যুদ্ধ করো বরবাদ!
০২. গাজার আকাশ
গাজার আকাশে বোমা বারুদের ধোঁয়া
গাজার বাতাসে রক্ত আর লাশের গন্ধ
গাজার জনজীবন ভয়ে-আতঙ্কে স্তব্ধ
পুণ্যভূমি আল-আকসা দখল নিয়ে দ্বন্দ্ব।
আসমান থেকে ফেলছে বোমা
ভাবছে কি তারা মগের মুলুক?
চাইলেই কি দখল করা যায়
সব ভূমিই কি আর খাস তালুক?
চলছে হামলা, জ্বলছে আগুন
নির্বিচারে ছুড়ছে গোলা
পুড়ছে ভবন, পুড়ছে জীবন,
সেই দৃশ্য যায় না ভোলা!
বাতাসে আজ বইছে যেন
তাজা নৃ-লস্যের ঘ্রাণ,
মুসলিম জাতি ভাবছে তাই
কীভাবে বাঁচাবে ভাইয়ের প্রাণ?
গাজার আকাশ কেঁদে ওঠে
গাজাবাসীর হাহাকারে
তাদের আর্তচিৎকার শুনে
মুসলিম হৃদয়ে রক্ত ঝরে।
গাজার আকাশ কাঁপে তবু
কাঁপে না ইহুদিদের আত্মা
আকাশ থেকে নামলে গজব
থাকবে না তাদের পাত্তা।
আল্লাহ! তুমি গাজার প্রতি
রাখো তোমার শুভ দৃষ্টি
গাজার আকাশে বর্ষণ করো
তোমার রহমতের বৃষ্টি!
মুসলিম জাতি দুই হাত তুলে
করছে শুধু একটাই আশ
স্বাধীন নতুন সূর্যের আভায়
ঝলমল করুক গাজার আকাশ!
০৩. বয়কট! বয়কট!
রমজান মাসের রোজায়
ফিলিস্তিনের গাজায়
কোন অপরাধের সাজা
দিচ্ছে ইসরাইলের রাজায়?
আকাশ থেকে ফেলছে বোমা
ছুড়ছে গোলা নির্বিচারে
আসমান-জমিন কেঁপে উঠছে
গাজাবাসীর হাহাকারে।
গাজাবাসীর আর্তচিৎকার
মুসলিম হৃদয়ে দাগ কাটে
গাজাবাসীর কষ্ট দেখে
মুসলিম জাতির কলিজা ফাটে!
গাজাবাসীর করুণ অবস্থায়
কাঁদে মুসলিমের মন-প্রাণ
গাজার বাতাসে প্রবাহিত হচ্ছে
নিষ্পাপ শিশুর রক্তের ঘ্রাণ।
গাজার বাতাসের রক্তের ঘ্রাণ
মুসলিম হৃদয়ে তুলে শিহরণ
মুসলিম জাতি ভাবছে তাই
কীভাবে জিহাদ করবে এখন?
তাইতো সকল মুসলিম বলে
গড়ে তুলবো এক ঐক্যজোট!
পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকেই
ইসরায়েলের পণ্য হবে বয়কট!
মুসলিম হৃদয়ে ধ্বনিত হচ্ছে
বয়কট! বয়কট! এই ধ্বনি
চারিদিকে তাই শুনতে যে পাই
বয়কট! বয়কট! প্রতিধ্বনি।।
[রচনা
কাল : ২৪/০৩/২০২৫ খ্রি:]
========
লড়াই চাই
মোদাচ্ছের বাবুল
ফিলিস্তিন, ইয়ামেন, সিরিয়া, কাশ্মির
পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ
পাহাড়, সমতল, ধুধু মরুভূমি
জল, স্থল, অসীম আকাশ
মানুষ হত্যার নিরন্তর মহড়া
পুরো বিশ্বজুড়ে
আগ্রাসন, শাসন, শোষণ
মুক্তি নেই, শান্তি নেই
মানবতা অবশিষ্ট নেই
মারে
মরে
শোষণ টিকে থাকে
ধার্মিক, বিধর্মী মারে
শোষক, বিপ্লবী মারে
শাসক, বিরোধী মারে
পুঁজিপতি, শ্রমিক মারে
আপাতচোখে কতই না বিভাজন!
কতভাবেই না মারে!
খুঁজে দেখো, শুধু শোষিতরাই মরে
যাঁরা শ্রমে-রক্তে,
বাসযোগ্য পৃথিবী গড়েছে
সভ্যতা গড়েছে
শোষকের বিলাসজীবন গড়েছে
শুধু গড়তে পারেনি
আপন ভুবন
নিজের জীবন
সেই আদিম থেকে মরেই চলছে
অনিবার্য নিয়তি মেনে
সে জানে না, পৃথিবীর যা কিছু আছে
সব কিছুতেই তাঁর সৃষ্টাধিকার
জানতে দেয় না, বিলাসী পরজীবী
শোষণতন্ত্র আর অলৌকিক ধোঁয়ায়
মানুষ ডুবে থাকে অমানুষের গড়া
পরজাগতিক সুখের ঘোর আশায়
পৃথিবীর যতো হত্যা
একটি হত্যাও নিছক ধর্মের জন্য নয়
ধর্ম একটি উপলক্ষ্য মাত্র
ভয় এবং ঢাল বই কিছুই নয়
প্রতিটি হত্যার মূলে রয়েছে
আগ্রাসন
শাসন
একটি লড়াই চাই, মুক্তির লড়াই
শোষণ
লড়াই হবে আটানব্বই বনাম দুই
শোষক আর শোষিতের
এই লড়াই বাঁচার লড়াই
এই লড়াইয়ে জিততে হবে
সামাজিক মালিকানা গড়তে হবে
শুধু শ্রমজীবীরাই পারি—
নিজের ও সকলের মুক্তি ছিনিয়ে আনতে
শোষণমুক্তির
মানবমুক্তির
সকলমুক্তির
একটি নতুন পৃথিবী গড়তে
========
দুটি কবিতা : ডিএম শফিকুল
ইসলাম
০১. তরুণের আহ্বান
ওরে অরুণ! ওরে তরুণ! ওরে আমার ভাই
কোথায় তোরা লুকিয়ে আছিস
কোথায় তোরা—ছাই!
শান্তি সুখের ঘুম ভাঙে আজ
ইসরায়েলি বোমার গর্জনে
আজ বিশ্ব কেন নিরব বসে
ফিলিস্তিনের ময়দানে ভাই ঘুম আনে?
শান্তি সুখের উল্লাসে কেন ফুলে ফেঁপে বান
ডাকে ওই
সাগর মাতার গর্জনে ভাই ফিলিস্তিনের ময়দানে?
অসত্যেরই লৌহ কপাট মিথ্যাবাদীর প্রাসাদ
দাপট
ভাঙরে কপাট কররে লোপাট হানরে আঘাত
যুদ্ধবাজের মূল আস্তানে।
স্বাধীনতা আনতে যদি ভাঙা লাগে লোহার শেকল
স্বাধীনতা রাখতে যাদি মারণ লাগে হাতুর
শাবল
সাত সমুদ্র তেরো নদী ডেঙতে পারি
বাঁধার নীলাচল।
ওরে অরুণ! ওরে তরুণ! হও হুশিয়ার লও হাতিয়ার
পা ফেল আজ সূক্ষ্ম অতি সাবধানে।
স্বপ্ন সুখের উল্লাসে আজ হৃদয় জাগুক
আমাদের এই আহ্বানে।
শক্তি সাহস জোয়ার নদীর বান ডাকুক
আজ সব প্রাণে ।
০২.
অনিবার্য পতন
মাংস খেকো হায়েনার দল
রক্ত পিয়াসে লাশ ভালোবাসে
রক্ত নেশায় রক্তের হলি খেলায় বিষম মাতে।
যে বুক মায়ের ভলোবাসায়
সিক্ত হওয়ার কথা
যে মুখ মায়ের স্নেহের পরশে
বাঁচিবার কথা
সেই মুখ, বুক হতে আজ
ফিনকি রক্ত নদীর নহর।
ওরে পাপিষ্ঠ! পাপাত্মা!
আর কত রক্তনদী হলে মিটবে পিপাসা?
ওরে নির্লজ্জ, বেহায়া, বধির
আকাশে বাতাসে মাতম ধ্বনি
শুধু তোর কানেই বাজে না!
বুকের উপর কষ্ট পাথর
আর সইতে পারি না
পৃথিবী তুই কবে এতটা সহনশীল?
তোর শুকনো মাটির গর্তে
সমস্ত রক্ত শুষেনে
নদীও একদিন শুকিয়ে যাবে
স্রষ্টাও শিঘ্রই কাহহার রূপে নামবে ধরায়—
সেদিন নেশার ঘোরে
তুই কাতর পিপাসায় মরবি
তোর পতন অনিবার্য ।
========
ফিলিস্তিন
শিশুর ঈদ
মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর
কবির
উঠেছে কি ঈদের চাঁদ ফিলিস্তিনের
আকাশে
বলতে পারেন কেউ?
আমি তো শুনি কান্নার আওয়াজ
করছে হাউ মাউ!
দেয়ালের চিপায় বিনিদ্রায় যেখানে
শিশুদের সময় কাটে,
ঈদের অন্নের আয়োজন সেখানে
আসে না প্রভু মোটে।
পাথর চাপায় হারিয়েছে যারা
হাত পা দেহ খানি,
এসেছে কি ঈদ তাঁদের দরজায়
শুনাতে বার্তা খানি?
সন্তানহারা মায়ের আহাজারি
যে আকাশ করছে ভারি,
সে আকাশের নীলে ঈদের চাঁদ
আমরা কি ভাবতে পারি?
অর্ধাহত রক্তাক্ত বাবার কাঁধে
যে জমিনে সন্তানের লাশ,
সে জমিনের মাঝে ঈদ এসেছে
এতো ভীষণ সর্বনাশ!
রোজাদারের কাছে পৌঁছেনি যেখানে
ইফতার, সাহরির অন্ন,
তাদের মাঝে ঈদের আয়োজন
কেবলই উপহাসের পণ্য।
নিত্যই যারা নিশিতে জাগে
ক্ষুধায় আসে না নিদ,
ওদের মাঝে কি নতুন ভাবে
বাজবে ঈদের গীত!
ক্ষুধার জ্বালায় যে শিশু খায়
মরুর শুকনো ঘাস,
ঈদের সংজ্ঞায় সে শিশুর কাছে
আছে কি জীবনের আশ?
[রচনা : ৩০-০৩-২০২৫]
========
নিজভূমে পরবাসী
ইয়াসিন আযীয
(উৎসর্গ: ফিলিস্তিনি শিশুদের)
নিজভূমে পরবাসী
ফিলিস্তিনি গাজাবাসী—
এটা পুরোনো গল্প।
আটচল্লিশে হয়েছে দখল শুরু
সেই থেকে দখল চলছে অল্প অল্প...
অপারেশন প্রটেক্টিভ এজ—
লক্ষ্য শিশু ও নারী
হচ্ছে হামলা: আকাশ-নৌ-স্থল
গুঁড়িয়ে দিচ্ছে শুধুই কি বসত বাড়ি?
ক্যামেরন, ওবামার পিঠে চড়ে নিয়াহু
রক্তহলি খেলছে, করছে উল্লাস—‘ইয়া-হু...’
জাতিসংঘ বরাবরের মতো শীতঘুমে
আরবলিগ নেতাদের ঈদ ছুটি
ইইউ ফুঁ দিচ্ছে ইরাক, ইউক্রেন আগুনে
মিসরের জান্তা সিসি, করে খুনশুটি।
নীরহের ওপরেই বেশি বোমা পড়ছে
শিশুরা জানে না, কেন ওরা মরছে।
বিশ্ব বিবেক ধুলায় লুটায় !!
মানবতা ডুকরে কাঁদে !!!
একতরফা গণহত্যা কী করে যুদ্ধ হয়।
মোড়ল আমেরিকা জবাব চাই—
ইসরায়েল কেন জঙ্গিরাষ্ট্র নয়???
[রচনা : ০২/০৮/২০১৪ খ্রি:]