খান মেহেদী মিজান এর একগুচ্ছ কবিতা

খান মেহেদী মিজান এর একগুচ্ছ কবিতা

 

খান মেহেদী মিজান এর একগুচ্ছ কবিতা

১. শরৎ কন্যা

আমনের খেতে রোদেলা বিকেল লুটোপুটি খায়

সোনার পুঁতির মতো ছড়িয়ে আছে সোনালি ধানের ছড়া

কৃষকের বাড়ি ঘিরে মৌ মৌ গন্ধ

শ্বাস বড় করা পিঠাপুলির ঘ্রাণ

আবার ফিরে যেতে মন চায় শৈশবের ধান কুড়ানোর দলে

হাঁটু জলে শাপলা ফোটা ভোর

মেঘভাঙা ধূসর-নীল আকাশ

শুভ্র কাশফুল নদীতীরে দোল দেয়

যুবতী বাতাস

ষড়ঋতুর পঞ্জিপাতা উল্টে দেখি

সে আমার ঋতুবতী শরৎ কন্যা।

 

২.শূন্যতার শহরে

ল্যাম্পপোস্টের নিয়ন আলোর প্রসাধনীতে

সহস্র-অযুত-নিযুত লোকের ভীড়েও

খুঁজে পাই না প্রিয় চেনা মুখগুলো

বুঝি-না কে আপন কেবা পর

ক্লান্ত শরীরে দুলতে দুলতে

লম্বা কদমে গলি সাঁতরে এগিয়ে যাই

আঁধারের জলে শ্রান্তির ডুব দিব সূর্যোদয়ের প্রতিক্ষায়

ডেকে জাগাবে কর্ম ঘন্টা

শুধু মাস শেষে ভাড়াগোনা ছাড়া

দেখা কিবা কথা হয় না রুমমেট বা

সাবলেট ভাড়াটিয়ার সাথে

বাড়িওয়ালার নিমন্ত্রণে দিন-মাস গোনা

পকেট শূন্য হয়েছে কতবার।

পরের দিন সে আর জিজ্ঞেস করেনি

কেমন আছি, কেমন চলছে দিনকাল?

কর্মে ডুবে থাকা সময়টাই ভুলিয়ে রেখেছে

সব কষ্ট, আপনজনের মুখ

ঘুম ভেঙে তাকাতেই সব অচেনা

ক্লান্তিজোড়া মায়াহীন এক শূন্যতার শহর।

 

৩. প্রেম ও ধর্ম

প্রেম

অবিনাশী সম্মোহনী শক্তিতে যার উদয়

মোহ মায়া আবেগের জনকে তবু 

বিপরীত লিঙ্গের মায়া জালে ফেঁসে যায়

অজান্তেই মানুষ-জীব বুঝি প্রেম

নৈঃশব্দে চলে অহর্নিশি চুম্বকীয় যুদ্ধ

যুদ্ধ নিজের সাথে পরিবার সমাজ ও 

ধর্মের সাথে

প্রেমিক যুগল ভেতরে ভাঙে

ভেঙে-চূড়ে হয় একাকার আবার

সঙ্গমরত শঙ্খ ও সাপের মতো

পেঁচিয়ে জোড়া লাগাতে চায়

সব ধর্মেই প্রেম আছে

প্রেমে জাত-কূল মানে না

প্রেমের কোনো ধর্ম নেই।

 

৪. প্রেমের নেপথ্যে

দিগন্ত জোড়া সুনীল আকাশ

এক আকাশ নীল খয়ে খয়ে পড়ে 

মিছরির দানার মতো

কোয়া কোয়া রোদের কণায়।

কখনো গিলে খায় মেঘের গ্রীবা

সমুদ্রের প্রেমে নদী ও ঝরনার অক্লান্ত ছুটে চলা

যেমন আকাশ ও মাটির প্রেম মিশে যায়

দূর গাঁয়ের অরণ্য আঁধারে মানুষের অলক্ষ্যে।

মানুষ প্রতিনিয়ত বাঁধার সম্মুখীন প্রেমে

আকাশ ও মাটি হলে নির্বিঘ্নে মিশে যেতো দূর গাঁয় 

ফুল ও মধুপ হলে প্রজাপতির পরাগায়নে হতো বাঁধাহীন চুম্বন ও সঙ্গম।

 

৫. মিছিল ও যুদ্ধ

মিছিলে যাওয়ার সময় এসেছে

হয়েছে যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময়

কে যাবে মিছিলে, কে যাবে যুদ্ধে?

ওই-তো একদল কবি মিছিলে যাচ্ছে

দলকানা কবি দলের।

কবিরাও বুঝি এখন দলকানা হয়ে যাচ্ছে!

স্লোগান শুনে কবিদের সহচর এই আমি

হতাশার জলে ক্রমেই ডুবে যাচ্ছিলাম

এ শুধু বালিয়াড়ি নয়, চোরাবালি

আমি দাঁড়ায়ে থাকলে তারা ডাকছেন

আমি বললাম, ‘কবি নজরুল আসে নাই

আসে নাই হেলাল হাফিজ’

তাই-তো বিশ্বাসের সাহস পাচ্ছি না

কোন পথে কার সাথে যুদ্ধে যাবো?

2 Comments

  1. দারুণ সব কবিতা! মিছিল ও যুদ্ধ, প্রেমের নেপথ্যে ভীষণ ভালো লাগলো

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post